Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মজনুর দায়েরকৃত মানহানীর মামলায় ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য এবং কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত অর্ধকোটি টাকার মানহানীর মামলায় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর আদেশ দিয়েছে আদালত।
আজ ৫ই ডিসেম্বর রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে এ মামলার প্রধান আসামী দৈনিক ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার মেহেদী হাসান আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরহাদ মামুন তার জামিন মঞ্জুর করেন এবং অপর আসামী পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়না জারি করা হয়।
গত ২২শে মার্চ-২০১৭ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে ‘অনেক মন্ত্রী-এমপির স্বজনেরা বেপরোয়া ঃ চলছে দখল, টেন্ডারবাজি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সরকারের উন্নয়ন ম্লান হচ্ছে, মনোনয়ন ঝুঁকিতে ৭০ এমপি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের আংশিক বিষয়ের প্রেক্ষিতে পত্রিকার রিপোর্টার মেহেদী হাসান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য এবং কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান মজনু গত ২৩/৩/২০১৭ তারিখে দন্ড বিধির ৫০০/৫০১ ধারার রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে মিসপি-৯২/২০১৭ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল)-এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম মিসপি-৯২/২০১৭ মামলার তদন্ত শেষে গত ৩১শে মে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন(তদন্ত প্রতিবেদন) দাখিল করেন। মামলার তদন্তের মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের সত্যতা পাওয়ায় বিজ্ঞ আদালত রিপোর্টটি গ্রহণ করে আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারীর আদেশ প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে দৈনিক ইত্তেফাকে জেলা পরিষদের সদস্য এবং কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান মজনুকে জড়িয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম ও তার লোকজনের সম্পর্কে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয় এবং মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর দায়েরকৃত দন্ড বিধির ৫০০/৫০১ ধারার অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তদন্তকালে জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান বিরুদ্ধে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে থানার ওসিকে ফোন করে আসামী ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা, বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরের টাকা আত্মসাৎ করা, নিরীহ মানুষকে পুলিশ দিয়ে হয়রানী, উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ছাড়ানো এবং পুলিশের পোষাক পড়ে চাঁদাবাজীসহ যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তার স্বপক্ষে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তদন্তে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে পাংশা থানাধীন নারায়ণপুর গ্রামের ‘আনন্দ ভুবন’ নামক বাড়ীতে ‘অজ্ঞাতনামা’ সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলা-কুশলীগণ সিনেমার শ্যূটিংয়ের জন্য অবস্থান করেন। সিনেমাটির প্রায় ৮০ শতাংশ শ্যূটিং পাংশা পৌরসভা ও পাংশা থানা এলাকার বিভিন্ন স্পটে সম্পন্ন করা হয়। শ্যূটিংয়ের সময় এলাকার উৎসুক দর্শক অভিনয়ের দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে জমায়েত হয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। সে কারণে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং শিল্পীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পাংশা থানার অফিসার ও ফোর্স নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করে। অভিনেতা মোশারফ করিমসহ অন্যান্য অভিনেতাগণ দীর্ঘদিন পাংশা পৌরসভা এলাকায় অবস্থান করায় তাদের সাথে মিজানুর রহমান মজনুর সুসম্পর্কের সৃষ্টি হয়। উক্ত সিনেমায় মোশারফ করিম একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন। সুসম্পর্ক সৃষ্টির একপর্যায়ে মোঃ মিজানুর রহমান মজনু অভিনেতা মোশারফ করিমকে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন মোশারফ করিম ‘আনন্দ ভুবন’ বাড়ীতে উপস্থিত পাংশা থানার এস.আই মোঃ কামাল হোসেন ভুঁইয়া ও এস.আই মোঃ হাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে অভিনয়ের জন্য নির্ধারিত পুলিশের পোষাকটি মোঃ মিজানুর রহমান মজনুকে পরিধান করার জন্য বললে তিনি তা পরিধান করেন। শ্যূটিং স্পটে পুলিশের পোষাকটি পরিধান করার কিছু সময় পর তিনি তা খুলে ফেলেন। কিন্তু অভিনয়ের জন্য ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় সেখানে উপস্থিত থাকা মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর এলাকার লোকেরা মোবাইল ফোনে তার ছবি ধারণ করে এবং পরবর্তীতে তা ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। পত্রিকার সংবাদে উল্লেখিত মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর পুলিশের পোষাক পড়ে চাঁদাবাজী করার বিষয়টি সত্য নয়।
মামলা তদন্তে সামগ্রিক বিষয়গুলো পর্যালোচনায় গত ২২/০৩/২০১৭ইং তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদের অংশিক বিষয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম ও তার লোকদের সম্পর্কে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়। সংসদ সদস্য তথা সমাজের সম্মানী ব্যক্তিদের সম্পর্কে এরূপ সংবাদ পরিবেশন অসম্মানীয় ও সম্মানহানীকর বলে মন্তব্য করা হয়।
বিজ্ঞ আদালত ওই তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলার দুই আসামী দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্টার মেহেদী হাসান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেনকে আদালতে হাজির হতে সমন জারির আদেশ দেন। সি.আর মামলা নং-৬৪৪/২০১৭ইং।
আজ ৫ই ডিসেম্বর মামলার ধার্য্য তারিখে রিপোর্টার মেহেদী হাসান আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। এছাড়া অপর আসামী পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়না জারী করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু এবং আসামী পক্ষে এডঃ মোঃ লিয়াকত আলী আদালতে মামলা পরিচালনা করেন।