॥শিহাবুর রহমান॥ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন,এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নেতাই নন, তিনি হচ্ছেন বিশ্বনন্দিত নেতা। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি ১৮ঘন্টা কাজ করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিনি সময়মতো আদায় করেন। ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করে তিনি ঘর থেকে বের হন। তিনি একজন ধর্মভীরু মুসলমান। তিনি নিজের ধর্ম নিজে পালন করেন এবং অন্যের ধর্মকেও তিনি শ্রদ্ধা করেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করেন বলেই এটা করেন।
গতকাল ২৩শে নভেম্বর দুপুরে রাজবাড়ী পৌরসভার আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী যখন গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছিলো, গণহত্যা চালাচ্ছিলো। শত শত মানুষ যখন নাফ নদীতে ভেসে রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিলো, আমরা প্রথমে তাদের এদেশে ঢুকতে দেইনি। তখন আমাদের বর্ডার গার্ড, পুলিশ নিয়ে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম যে প্রধানমন্ত্রী কি বলেন। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন এদের আসতে দাও, এদের বাঁচতে দাও। প্রধানমন্ত্রী শুধু রোহিঙ্গাদের এনেই বসে থাকেননি। তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুটে গেলেন তাদের কাছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আপনার কুতুপালং ক্যাম্পে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ যেখানে যাবেন তার পাশেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সেখানে যাওয়া নিরাপদ নয়। প্রধানমন্ত্রী বললেন, না আমি সেখানে যাবোই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে গেলেন, বুকে জড়িয়ে ধরলেন সর্বস্ব হারানো রোহিঙ্গাদের। এ সময় চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি। সে সময় তার সাথে শেখ রেহেনাও ছিল তিনিও কেঁদেছেন। এই হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে বিশ্ববাসী তাকে “মাদার অফ হিউম্যানিটি” খেতাব দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন আরো বলেন, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নির্বাচনে বলেছেন তিনি বদলে দিবেন বাংলাদেশকে। আজ আপনারা একটু চোখ বুজে দেখেন তো শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বদলে দিয়েছে কিনা? তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করবেন। চোখ বন্ধ করে দেখেন তো বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে কিনা। বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা সেক্টরে আমাদের সরকার উন্নয়ন করছে। খাদ্য ঘাটতির দেশটি আজ বিদেশে খাদ্য রপ্তানী করছে। তিনি শুধু বাংলাদেশকেই বদলে দেননি। সারা বিশে^র মধ্যে রোল মডেল তৈরী করেছেন। বিদেশীরা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন আপনি কিভাবে এটা সম্ভব করেছেন। তিনি বলেছিলেন জনতার শক্তি কাজে লাগিয়ে এটা করেছেন। এর প্রমান জঙ্গী দমন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নারীদের অধিকার সংরক্ষণ, সকল শ্রেণী পেশায় নারীদের সমান অংশ গ্রহণসহ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে মডেল তৈরী করেছেন। তার নেয়া এসব পদক্ষেপ বিশ্বনন্দিত হয়েছে। তাই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্ল্যানেট ফিফটি ফিফটি চ্যাম্পিয়ান’ এবং ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ এ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করেছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তার সুদূরপ্রসারি কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ পলিসি লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে তাকে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বিশে^র ১০০ জন রাষ্ট্র প্রধানের ওপর ১০টি বিষয়ে জরিপ চালিয়ে দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থান তৃতীয়তে। তার সামনে যাওয়ার স্বপ্ন আছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কোথায় যাবে। এসব নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন। বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার দেশ নয়। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। তাই শেখ হাসিনার বিকল্প কিছু নাই। তার বিকল্প তিনি নিজেই। এগিয়ে যেতে হলে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অন্ধকার থেকে আলোকিত হতে হলে একটি মাত্র উপায় তা হলো আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করা। শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৪১ এর সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৩৮ এর সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্তি আইজিপি ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি মোহাঃ শফিকুল ইসলাম,বিপিএম, রাজবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড.একেএম আজাদুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা এবং পৌর নাগরিকদের পক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মোঃ রেজাউল করিম রেজা বক্তব্য রাখেন।
এরআগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজবাড়ী সার্কিট হাউজে পৌঁছালে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলী, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড.একেএম আজাদুর রহমান এবং পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর রাজবাড়ী জেলা পুলিশের একটি চৌকষ দল মন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।