॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১২ই নভেম্বর সকাল ১০টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, সিভিল সার্জন ডাঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, জেলা জাসদের(আম্বিয়া) আহবায়ক স্বপন কুমার দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুর রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, সার্বিক দিক বিচারে গত মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো ছিল। শুধুমাত্র একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একজন মানুষ মারা গেছে। জেলা পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র্যাব জেলার মাদক দ্রব্য উদ্ধারে সফলতার সাথে তাদের অভিযান পরিচালনা করেছে। যার কারণে জেলায় মাদক ব্যবসা ও সেবন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এই মাদক নিয়ন্ত্রণে সফল অভিযান পরিচালনা, বেশী পরিমাণে মাদক আটক, রাজবাড়ী জেলায় সফলতার সাথে এক বছর অতিবাহিত করা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে অংশগ্রহণসহ অভিযানে জেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য পুলিশ সুপারকে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী আরো বলেন, আপনারা সবাই পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে অবগত কিছুদিন আগে রাজবাড়ীতে একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটছে। এক নরপিশাচ পিতা ও তার সহযোগী মিলে নিজের শিশু সন্তানকে ধর্ষণ করেছে, যা জাহেলী যুগকেও হার মানিয়েছে। পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, সেই নরপিশাচ পিতা ও তার সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমরা সকলে আশা করি, এই নরপিশাচ মানুষরুপী জন্তুদের বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলা সীমান্তবর্তী না হয়েও এখানে ব্যাপক ফেন্সিডিলের চালান পাওয়া যায়। বিষয়টি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মিটিংয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির উপস্থিতিতে আলোচিত হয়েছে। আমি পুলিশ সুপারসহ সকলকে অনুরোধ করব জেলায় যাতে ফেন্সিডিলের চালান না ঢুকতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে আদিকালে অপরাধ ছিল, বর্তমানে আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যারা অপরাধ করে তারা ধরা পড়েছে কিনা। আমাদের সকলকে এই সকল অপরাধীদের থেকে জেলাকে রক্ষাকল্পে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়াও সভায় জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ ও যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণসহ আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা তার বক্তব্যের শুরুতে জেলার সকল নাগরিকসহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে জেলায় যে মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহসহ সকল অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে-সেটি সম্ভব হয়েছে এ জেলার নাগরিকদের সহযোগিতা, তথ্য প্রদান ও আন্তরিকতার কারণে। আমি যোগদানের প্রথম থেকে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশী কাজ করেছি সেটি হলো মাদক। যার কারণে আজকে জেলায় মাদকের ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। পাশাপাশি বাল্য বিবাহ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যাতে না ঘটে সে বিষয়টি খেয়াল রাখার কারণে আজ রাজবাড়ীর আইন-শৃঙ্খলা ভালো রয়েছে। যেহেতু শীতে মহাসড়কে অন্য সময়ের তুলনায় ডাকাতির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় সেদিকে খেয়াল রেখে জেলা পুলিশ ডাকাতি রোধকল্পে বিশেষ টহলের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গত মাসে জেলায় ৩টি খুনের ঘটনাসহ একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে। এই সকল ঘটনার সাথে জড়িত সকল আসামীকে পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়েছে। আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল সাধারণ নাগরিককে অনুরোধ জানাবো, আপনাদের বাড়ীর পাশে যদি কোন মাদক, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, বাল্যবিবাহ সংগঠিত হয় তাহলে তাৎক্ষণিক জেলা পুলিশকে অবহিত করুন। জেলা পুলিশ সব সময় বন্ধু হিসেবে আপনাদের পাশে রয়েছে।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার শেষে একই স্থানে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে জেলা ভিক্ষুক পুনর্বাসন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।