Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীর বসন্তপুরের কলা ব্যবসায়ী জিল্লু হত্যার ১১দিন পর জঙ্গল থেকে শ্বশুরের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার

॥দেবাশীষ বিশ্বাস/আশিকুর রহমান॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কলা ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান (৩৭)কে হত্যার ১১দিন পর থেকে তার শ্বশুর সোবাহান মোল্লা(৫৫)-এর ঝুলন্ত মৃতদেহ থানা পুলিশ উদ্ধার করেছে।
গত ২৯শে অক্টোবর রাতে বাড়ীর পাশের জঙ্গলের একটি গাছের সাথে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আর্থিক ও মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা।
নিহত সোবাহান মোল্লার বড় ভাই মনিরদ্দিন মোল্লা বলেন, মেয়ে রুবি বেগমের স্বামী কলা ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান (৩৭)-এর বাড়ী ও সোবাহানের বাড়ী পাশাপাশি। গত ১৮ই অক্টোবর রাতে বাড়ীর পাশের একটি ক্ষেতের মধ্যে জিল্লুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জিল্লুর বাবা শেখ মোঃ জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার পর সন্দেহজনকভাবে জিল্লুর আপন ভগ্নিপতি হিরুকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। বর্তমানে হিরু জেল হাজতে আটক রয়েছে। গত ২৯শে অক্টোবর সকালে জিল্লুর হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সোবাহানের থানায় যাওয়ার কথা ছিলো। সকাল ৯টার দিকে গোসল করতে বের হয়ে সে আর ঘরে ফেরেনি। সারা দিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাত ৯টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন বাড়ীর পাশের নির্জন জঙ্গলের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ মরদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর হলে তারা গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
মনির উদ্দিন মোল্লা আরও বলেন, সোবাহানের মেয়ে রুবির ঘরে ৪টি মেয়ে সন্তান রয়েছে। জামাই জিল্লু হত্যাকান্ডের পর মেয়ে ও নাতনীদের নিয়ে সোবাহান অনেক দুশ্চিন্তায় ছিল। এছাড়াও একমাস আগে এনজিও থেকে মোটা অংকের টাকা লোন নিয়ে সে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে এখনো ভালো কাজ পায়নি ছেলে। এসব মিলিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে সোবাহান আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত সোবাহানের পুত্রবধু জোসনা বেগম বলেন, জামাতাকে হত্যার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এছাড়াও নিহত জিল্লুর ঘরের ৪টি সন্তানের চিন্তা, বড় ছেলে মোঃ মমিন মোল্যাকে ৫লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে পাঠিয়েও কোন কাজ না পাওয়া, নিজের আরেক সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়, কিস্তির চাপ, সংসার চালানো ইত্যাদির কারণে তিনি দুঃচিন্তায় ছিলেন। এজন্য তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাই বলেন, ২টি পরিবার হঠাৎ করেই অসহায় হয়ে গেল। এই পরিবারগুলো আগামী দিন কি খাবে সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার কেউ নেই। সোবাহানের বড় ছেলে বিদেশে গেলেও এখনো কোন কাজ পায় নাই। শোনা যাচ্ছে, ফ্রি ভিসায় সৌদিতে কোন কাজ পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এই পরিবারের খাবার জোগাড় করার মতো কোন পুরুষ মানুষ রইলো না। সোবাহানের ছোট ছেলে মাসুদ মোল্যা প্রতিবন্ধী হলেও রাষ্ট্রীয় কোন সহায়তা পায় না।
নিহত সোবাহানের জামাতা জিল্লু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজবাড়ী সদর থানার এস.আই রঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, জিল্লুকে হত্যার পর তার আপন ভগ্নিপতি হিরুকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জিল্লু হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে সে, যার ফলে মামলার তদন্তকাজ অনেকটা এগিয়েছে। রিমান্ড শেষে গত ২৯শে অক্টোবর আদালতে মামলার তদন্ত অগ্রগতির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিনই জঙ্গল থেকে জিল্লুরের শ্বশুর সোবাহানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সোবাহান আত্মহত্যা করেছে। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।