Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

ভিজিএফ সহায়তা পায়নি রাজবাড়ীর জেলেরা॥অভিযানের মধ্যেও পদ্মায় লুকোচুরির মাধ্যমে ইলিশ শিকার অব্যাহত

॥রেজাউল করিম॥ পদ্মা নদীর রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন অংশে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেদের ইলিশ শিকার চলছেই।
জেলেরা বলছে, তাদের কিছুই করার নেই। ‘ঘরে চাল, ডাল, তরকারি নেই। তারা খাবে কী?’ সরকার গত তিন বছর ধরে মাসব্যাপী নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। ওই সময়ে প্রতি জেলেকে ২০ কেজি করে চাল সাহায্য দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও রাজবাড়ীর তালিকাভুক্ত প্রায় ১০হাজার জেলের কেউই এক ছটাক চালও পায়নি। অন্য কাজ এ সময়ে না থাকায় জেলেদের পরিবারগুলো খুব কষ্টে আছে। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে তারা ভ্রাম্যমান আদালত, থানা পুলিশ ও মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে ইলিশ শিকার করছে।
গতকাল ১৯শে অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কালিতলা ও গোদার বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু নৌকা মাছ শিকার করছে। কিছু সময় পর সেখানে প্রায় এক মণ মাছ শিকার করে ফিরে আসা এক জেলে বলেন, পেটে দিলে পিঠে সয়। নিষেধাজ্ঞা দেবে-অথচ খাবার দেবে না, তাহলে আমরা না খেয়ে মরবো?
অপর এক জেলে বলেন, ‘শুনছিলাম মৎস্য অফিস এই নিষেধাজ্ঞার সময় আমাগের চাল দেবে। চাল দেয়া দূরের কথা, একবারের জন্য জিজ্ঞাসাও করে নাই আমরা কেমন আছি। বরং যারা তাগের ফাঁকি দিয়ে নদীতে নামতাছে তাগরে ধইরা নিয়ে জেলে ঢুকাইয়া দিতাছে।’
জেলে হরিপদ হালদার বলেন, নদীর পাড়ে বসবাস করা বেশীর ভাগ জেলেই দিন এনে দিনে খাওয়া পরিবারের সদস্য। একদিন নদীতে মাছ না ধরলে তাদের পরিবারের সদস্যদের অনাহার, অর্ধাহারে কাটাতে হয়। তাই প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারীর সাথে সাথে যদি চাল বিতরণ করতো তাহলে জেলেরা নদীতে নামতো না। এ কার্যক্রমটা আরো বেগবান হতো। তিনি আরো বলেন, বিগত বছরও তাদের কোনো চাল দেয়া হয়নি। তাই তিনি জরুরী ভিত্তিতে তাদের মাঝে চাল বিতরণের দাবী জানান।
এদিকে ইলিশ রক্ষায় প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা মৎস্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় নদীতে অভিযান পরিচালনা করে জেলেদের আটক করছে। জব্দ করা হচ্ছে কারেন্ট জাল ও মাছ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক জেলেদের করা হচ্ছে জরিমানা এবং দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড। পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে জব্দকৃত জাল।
জেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বহু ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ২ থেকে ৪জন করে জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত আছে। কেউ জাল ফেলছে, কেউ তুলছে আবার কেউবা নৌকা নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক উৎসুক জনগণকে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে মাছ ধরা দেখতে।
একাধিক জেলে বলেন, যে সময় নদীতে মাছ বেশী পাওয়া যায় সে সময়ই মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা জারী করে সরকার। এ সময় মাছ ধরতে নদীতে নামলেই জাল-নৌকাসহ তাদের ধরে নিয়ে জেল-জরিমানা করা হয়। কিন্তু মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে তাদের সংসার চলবে কিভাবে? এ জন্যই বাধ্য হয়ে জেল-জরিমানার ভয় না করে তারা মাছ ধরতে নদীতে নামছে। এ সময় কোন সাহায্য-সহযোগিতা পেলে তারা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখতেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মজিনুর রহমান বলেন, জেলা মৎস্য বিভাগ পদ্মা নদীকে মাছ ধরার নৌকামুক্ত রাখতে দিন-রাত পরিশ্রম করছে। এতে সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। অভিযানে গত ১৮দিনে তিন শতাধিক জেলেকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। সেই সাথে কয়েক লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে জেলেদের সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন থাকলেও তারা এখনো সহায়তা পায়নি। জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা দেয়ার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।