॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা শিশু একাডেমীর আয়োজনে গতকাল ১৮ই অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় শিশুদের রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার বক্তব্য রাখেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলীমুর রেজা। শিশুদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আফরাজুল রহমান। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জেলা এনসিটিএফের প্রধান উপদেষ্টা সাদমান সাকিব রাফি। এ সময় বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সংশি¬ষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে আদরের ছোট ভাই ছিল শেখ রাসেল। যাকে শিশুকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেই জন্য আজকের দিনটি যেমন আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের, তেমনি তার জন্মদিনের জন্য আনন্দের। আজকে যদি শেখ রাসেল বেঁচে থাকত তবে সে আজকে দেশের নেতৃত্ব দিত। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ রাসেলের খুনীদের বিচার করেছেন ও তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করেছেন। সুতরাং প্রতিটি শিশুরই শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকান্ডের ইতিহাস জানা প্রয়োজন। যাতে তারা শেখ রাসেলের চেতনাকে বুকে ধারণ করে নিজেদেরকে দেশের শিক্ষিত সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে পারে।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, আজকে যার জন্মদিন পালিত হচ্ছে সে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। যাকে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মদদপুষ্ট এ দেশেরই কিছু উচ্চাভিলাসী বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে তার পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে প্রাণ দিতে হয়েছিল। যখন তাকে হত্যা করা হয়েছিল তখন সে ছিল শিশু। পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম শিশু হত্যার ঘটনা আর দ্বিতীয়টি নাই। তার সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরো দুই শিশু বাবু ও সুকান্তকেও নরপিশাচরা হত্যা করেছিল। সেই জন্য আজকের দিনটি আমাদের কাছে যেমন বেদনার, তেমনি আনন্দের। পৃথিবীর ইতিহাসে যত যুদ্ধ হয়েছে সব যুদ্ধেই নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সকল নারী, শিশুসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও হত্যা করা হয়েছিল। যা ছিল স্মরণকালের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত হত্যাকান্ড।
তিনি বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে এখানে তোমরা যারা শিশুরা রয়েছো তোমাদের সকলকে শেখ রাসেলের মত করে নিজেদের তৈরী করে তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। যাতে শেখ রাসেলের মত শিশু দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছে তার সেই আত্মত্যাগ বৃথা না যায়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২লক্ষ মা-বোনের সম্ভমহানীর বিনিময়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই সময়ে আমাদের এই বাঙালী জাতির স্বাধীনতা যারা মেনে নিতে পারেনি বা যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তাদের সঙ্গে খন্দকার মোস্তাকের মত বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটের কিছু কুলাঙ্গারের গভীর ষড়যন্ত্রে কিছু উচ্চাভিলাসী বিশ্বাস ঘাতক সামরিক কর্মকর্তার হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু ও তার কনিষ্ঠ পুত্র রাসেলসহ তার পরিবারের ১৫জন সদস্য শাহাদতবরণ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তারা বঙ্গবন্ধুর সহচর জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করেছিল। যা ছিল ইতিহাসের একটি বর্বরোচিত ঘটনা। আবার খন্দকার মোস্তাকের ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী ও জিয়াউর রহমানের সেই ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ মহান জাতীয় সংসদে পাশের মাধ্যমে আইনে পরিনত করে বঙ্গবন্ধু ও তার খুনীদের রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ ভালবাসার কারণে তার বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলসহ তার পরিবারের সদস্যদের খুনীদের বিচার করেন ও ১২জন খুনীর মধ্যে ৬ ৎজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করে বাঙালী জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন। আজকে আমাদের নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেল হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে তারা সোচ্চার হয়ে আহবান জানাচ্ছে পৃথিবীতে যেন শেখ রাসেলের মত কোন শিশু মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার না হয়।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেলের এই জন্মদিনে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সকল শিশুকে নিজেদের শিক্ষিত ও বিশ্বমানের যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার মাধ্যমে শেখ রাসেলের মত শিশুর দেশের জন্য আত্মত্যাগকে শক্তিতে রূপান্তর করে কাজ করার আহবান জানান।
আলেচনা অনুষ্ঠান শেষে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে শিশু একাডেমীর শিশুদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।