Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

সড়ক বিভাগ কর্তৃক নিলামে বিক্রির পর এবার রহস্যজনক কারণে গাছের মালিক বন বিভাগ!

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী শহরের সরকারী হাঁস-মুরগীর খামার পর্যন্ত দীর্ঘ ১২কিঃ মিঃ সড়ক সম্প্রসারণের জন্য সড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের লাগানো মূল্যবান মেহগনি গাছ নিলামে বিক্রির পর রহস্যজনক কারণে এবার গাছের মালিক বন বিভাগ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।
সড়কের পাশে লাগানো গাছের মালিকানা পাল্টানোর এ ঘটনার সাথে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল ৭ই অক্টোবর জেলা প্রশাসকের নিকট ফজলুল হক ও আব্দুল আজিজ সর্দার নামের দুই ঠিকাদার লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, বিগত ৫০/৬০ বছরের পুরাতন মেহগনি, রেইনট্রি, কড়োই, সাদা কড়োইসহ ২২৫টি গাছ বন বিভাগের দেখানো হয়েছে। পূর্বে এ সকল গাছ সরকারী কর্মচারীরা কালো দাগ দিয়ে মার্কিং করে সড়ক বিভাগের বলে তালিকা করে। টেন্ডারে বিক্রির পর উক্ত মার্কিং রাতের আঁধারে সরিয়ে কালি পরিবর্তন করে অর্ধ কোটি টাকার গাছ বন বিভাগের গাছ হিসেবে দেখানো হয়। বন বিভাগ ১৯৯৭ সাল ও ২০০৩ সালে সড়কের পাশে কিছু রেইনট্রি কড়োই, ইপিলইপিল, একাশি, বননিম প্রভৃতি গাছ রোপন করে। যা তেমন পরিপক্ক হয়নি।
এ ঘটনায় টেন্ডারে ক্রয়কারী ব্যক্তিগণ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার চেয়ে অভিযোগ করেছেন।
ভূক্তভোগীদের দাবী, যদি টেন্ডারে বিক্রিকৃত গাছ সড়ক ও জনপথ বিভাগের না হয়, তবে কিভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ টেন্ডারে তা তাদের বলে উল্লে¬খ করেছে। তাছাড়া বন বিভাগ কিভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের শতবর্ষী পরিপক্ক ও বিশাল আকৃতির গাছগুলি তাদের বলে দাবী করে এবং মার্কিং করে।
পক্ষান্তরে বন বিভাগের রোপনকৃত তথ্য মোতাবেক ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালের তালিকায় শতবর্ষী মেহগনি বা কড়োই গাছের কোন উল্লে¬খ নাই।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে রাস্তার পাশের গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এতে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন তদারকী বা কার্যকরী ভূমিকা নেই।
একটি সুত্র জানায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে গাছগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসাবে ছিল সেগুলোকে তারা কালো মার্কিং করে রেখেছিল। গত ২৭/০৩/২০১৭ইং তারিখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যৌথ স্বাক্ষরে গোয়ালন্দ মোড় থেকে চন্দনী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মোট ২৫টি লট হিসাবে ভাগ করে খাড়া গাছগুলোর মার্কিং এর সার সংক্ষেপ তৈরি করা হয়। তাতে ১৯৯৭-১৯৯৮ সালের পর যে সকল গাছ রোপন করা হয় হয়েছিল তা রাজবাড়ী বন বিভাগ বুঝে নেয় এবং ১৯৯৭-১৯৯৮ সালের পূর্বের যে সকল পুরাতন গাছ ছিল তা রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা বুঝে নিয়ে যৌথভাবে গাছের মার্কিং এর সার সংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন। অথচ সড়ক ও জনপথ বিভাগের শতবর্ষী পরিপক্ক গাছ এখন বন বিভাগ মার্কিং করছে কিভাবে?
এ বিষয়ে ঠিকাদার ফজলুল হক জানান, টেন্ডারের মধ্যে যে গাছগুলো স্বাধীনতার পর সড়ক ও জনপথ রোপন করেছিল সেই গাছগুলো আমরা সরেজমিনে দেখে টেন্ডার দেই। কিন্তু সড়ক ও জনপথের পছন্দের ঠিকাদাররা উক্ত টেন্ডার না পাওয়ার কারণে সড়ক বিভাগ ও বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা মিলে কালো মার্কিং করা পুরাতন গাছের গায়ে লাল রং দিয়ে বন বিভাগের হিসাবের মধ্যে নিয়ে যায়। ২৭/০৩/২০১৭ইং তারিখের খাড়া গাছের মার্কিং এর সার সংক্ষেপ শিটে জালিয়াতি করে সড়ক বিভাগ আমাদেরকে পথের ফকির করার জন্য এই কাজ করেছে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের ফরিদপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা এনামুল হক ভুঁইয়া বলেন, সড়ক ও জনপথের গাছ যদি বন বিভাগে এসে থাকার বিষয় আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শনে রাস্তার পাশে বসতবাড়ীর লোকজন ও জনসাধারণ জানান, এই রাস্তার পাশের দন্ডায়মান মূল্যবান শতবর্ষী মেহগনি, শীল কড়োই, শিশু ও রেইনট্রি কড়োই গাছগুলো অনেক দিনের পুরাতন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের লাগানো গাছ।