॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে ‘ভবিষ্যৎ অগ্রসরে সমাজে প্রবীণদের দক্ষতা, অবদান এবং অংশগ্রহণ’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের আয়োজনে গত ১লা অক্টোবর সকালে র্যালী, আলোচনা সভা এবং মমতাময় ও মমতাময়ী পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, জেলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, সনাকের সভাপতি প্রফেসর শংকর চন্দ্র সিনহা প্রমুখ। এ সময় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অন্যান্য সদস্যগণসহ প্রবীণরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সমাজে যারা প্রবীণ রয়েছেন তারা সবসময়ই আমাদের শ্রদ্ধাভাজন। আমাদের সকলেরই উচিত তাদের প্রতিটি কাজের মূল্যায়ন করা কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অনেক সন্তানই তাদের প্রবীণ পিতা-মাতাদের ভরণপোষণসহ যে দায়িত্ব পালন করার কথা তা করছে না। উপরন্তু বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আজ থেকে ৩০বছর আগে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রায় প্রতিটি সন্তানই বৃদ্ধ পিতামাতাকে তাদের পরিবারের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করতো। তাদের ভরণপোষণ ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় দায়িত্ব সন্তানই পালন করতো। পবিত্র কোরআনে ‘মাতার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত’ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। সাহাবীগণ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে ৩বার জিজ্ঞাসা করেছিলেন সৃষ্টিকর্তার পরে কার স্থান, তিনি ৩বারই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন সৃষ্টিকর্তার পর মায়ের স্থান। এছাড়া অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের বিশেষ দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং সবদিক দিয়েই সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পেতে হলে সন্তানকে মাতাপিতার প্রতি অবশ্যই তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের অনেক সন্তানই তার পিতামাতাকে বোঝা বলে মনে করে। তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের প্রবণতা কিছুটা থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলোতে বয়স্ক পিতামাতার প্রতি সন্তানরা দায়িত্ব পালন করে না বললেই চলে। বর্তমান সরকার সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রতিটি ব্যক্তির বেতন পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্য ৬জন ধরে নির্ধারণ করেছে। পিতামাতা আমাদের ছোটবেলা যেভাবে লালন-পালন করেছে আমাদের সকলের উচিত সেভাবে তাদের ভরণপোষণসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করা। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সন্তানরা আমাদেরকে দেখে শিখতে পারে পিতামাতার প্রতি কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
আলোচনা সভার শেষে প্রবীণ পিতামাতাকে সেবা করার জন্য ১জন পুরুষ ও ১জন নারীকে মমতাময় ও মমতাময়ী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, আলোচনা সভার পূর্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খানের নেতৃত্বে একটি র্যালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।