॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে শত শত ঘর-বাড়ী, হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি এবং অসংখ্য পুকুর ও মাছের ঘের পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদে বিঘœ ঘটছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ও উজানচর ইউনিয়নসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনের পুরনো প্রবাহমান সরকারী, বে-সকারী খাল ও জলাশয়ের মুখ ভরাট করে ব্যক্তি মালিকানায় বাড়ী-ঘর ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও স্থানীয়দের ম্যানেজ করে তাদের এসব বাড়ী-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। পর পর কয়েক বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খাল ভরাটে তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এ বছর বৃষ্টিপাত বেশী হওয়ায় এলাকার কৃষক ও নিম্নাঞ্চলের বাড়ী-ঘরের মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। ফলে কোথাও কোথাও খালের ভরাট মুখ খুলে দেওয়ার জন্য তাদেরকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে দেখা গেছে। কখনও খালের মুখ খোলাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খাল পুনঃ খননের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করছেন।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জমিদার ব্রীজ এলাকায় কবরস্থানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খাল সাম্প্রতিক সময়ে ভরাট করে ভিক্টর ব্রীডার্স নামে একটি ফিড মিল তৈরী করা হয়।
ওই এলাকার আঃ রাজ্জাক ও মোশারফ আহম্মেদ জানান, এক সময় এলাকার পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হতো। ভরাট হয়ে যাওয়ায় আশ-পাশের বাড়ীগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চর বালিয়াকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দীর্ঘদিনের খালটি ভরাট করে বাড়ী-ঘর নির্মিত হয়েছে।
চর বালিয়াকান্দি গ্রামের অজয় বিশ^াস, নয়ন কুমার বিশ^াস, নলডুবির সাইদুল মোল্ল¬া, কদমতলির ইসমাইল মাতুবর প্রমুখ জানান, ছোট ভাকলা ইউপির মাইটকুড়া এলাকার চৈতার জোলাটি বন্ধ থাকায় চর বালিয়াকান্দি, হাউলি কেউটিল, নলডুবি, কদমতলি এলাকার প্রায় দুই হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ছোট ভাকলা ইউপির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের সহযোগিতার এলাকাবাসী জোলার মুখটি খুলে দিতে পারায় মাঠের ফসল রক্ষা পায়।
ছোট ভাকলা ইউপির সদস্য তোরাপ আলী জানান, ভাগলপুর এলাকার মাঠের পানি নিষ্কাশন করে ফসল রক্ষার জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর জোলা, জমিদার ব্রীজ খাল, রেলগেট, ছোট ভাকলা ইউনিয়নের পাটনিবাধা খাল, তৈতার জোলা, কাটাখালী ক্যানাল, নলডুবি খালসহ গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রায় অর্ধ-শতাধিক ছোট-বড় খাল আছে। একসময় কোন কোন খালে সারা বছরই পানি প্রবাহিত হতো। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে সবগুলো খালেই স্রোত বয়ে পানি চলাচল করত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খালগুলো ভরাট করা হয়েছে। এতে করে এসব এলাকার বাড়ী-ঘর ও মাঠের ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ছোট ভাকলা ইউনিয়নের মাইটকোড়া গ্রামের মনি সরদার, আরব আলী সরদার, চর বালিয়াকান্দির সেকেন শেখ, মকছেদ শেখ, কিয়ামদ্দিন শেখ, মোতালেব মোল¬া, ফজলা শেখ, আলামিন শেখ, আক্কাছ শেখ, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আলম মহরী, আঃ মান্নানসহ উপজেলার শত শত মানুষের বাড়ী পানিবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার বাড়ীর লোকজন এখন বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া মজিবর চেয়ারম্যানে পুকুর, বক্কারের পুকুর, লতিফের পুকুর, বাবলুর পুকুর, আঃ রহমানের পুকুরসহ অসংখ্য পুকুর পাড় ডুবে যাওয়ায় জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবু বক্কার ও ছোট-ভাকলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মোল্ল¬া বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বাড়ী-ঘর তৈরীর কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এগুলো নিরসন হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে ছোট ভাকলা ইউপির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে পাটনিবাধা ক্যানাল, ভাগলপুর খাল, কাটাখালী ক্যানাল, অম্বলপুর খাল, চর মাইটকোড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বহু দিনের পুরনো খালগুলো পুনঃখনন বা সংস্কার করা দরকার। খালগুলো খনন করা হলে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে ইউনিয়নবাসী দুর্ভোগের হাত থেকে নিস্কৃতি পাবে।
উজানচর ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে বেশ কিছু খাল দীর্ঘ দিন ধরে খননের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে। এতে অনেক বাড়ী-ঘর বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।