Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরী পারের অপেক্ষায় অসংখ্য ট্রাক॥যাত্রীবাহি বাসেরও দীর্ঘসারি

॥এম.এইচ আক্কাস॥ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরী সংকট কাটছে না। ফলে প্রতিদিনই যানবাহন পারাপারে বিঘœ ঘটছে। এতে দৌলতদিয়ায় যাত্রীবাহি বাসের দীর্ঘ সারি থাকছেই। এছাড়া অসংখ্য ট্রাক ৩/৪দিনেও নদী পার হতে পারেনি।
স্থানীয় বিআইডব্লিউটিসি সুত্র জানায়, প্রয়োজনীয় সংখ্যাক ফেরী থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বহরে থাকা সবগুলো ফেরী সব সময় এক সাথে চলতে পারে না। গত কয়েকদিন রো-রো(বড়) ফেরী শাহজালাল যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে পড়ে আছে। ঈদ পরবর্তী সময়ে বাড়তি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরী বহরের ১৯টি ফেরীর পাশাপাশি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট থেকে এনায়েতপুরী ও ক্যামেলিয়া নামের আরো দু’টি ফেরী এ রুটে আনা হয়। তখন মোট ২১টি ফেরী দিয়ে যানবাহনের চাপ সামাল দেয়া হয়। গত সোমবার ফেরি দু’টি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় ইঞ্জিন সমস্যায় বিকল হয়ে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় মেরামতে আছে রো-রো ফেরী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। ৪দিন ধরে কে-টাইপ ফেরী কুমারী ও ৯দিন ধরে ইউটিলিটি ফেরি চন্দ্র মল্লিকা বিকল হয়ে পাটুরিয়া ভাসমান কারখানা মধুমতিতে রয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিন দুর্বলের কারণে রো-রো ফেরী বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান রাতে চলাচল করতে পারছে না। এরআগে বড় মেরামতের জন্য কে-টাইপ কপোতীকে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এই নৌপথে ছোট-বড় ১৪/১৫টি ফেরি চলাচল করছে।
গত মঙ্গলবার যান্ত্রিক ত্রুটিতে রো-রো ফেরী খানজাহান আলী, ইউটিলিটি ফেরি হাসনা হেনা ও বনলতা বিকল হয়। ফেরীগুলো আইটি জাহাজের সাহায্যে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় নেওয়া হয়। একইদিন পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে এসে দৌলতদিয়ার ১নম্বর ঘাটের কাছে এসে রো-রো ফেরী বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। ফেরীটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পন্টুনের সাথে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে ফেরীটি বিকলসহ পন্টুন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফেরীগুলো দ্রুত মেরামত শেষে পুনরায় চলাচল শুরু করে।
পাটুরিয়া ভাসমান কারখানা মধুমতির প্রকৌশলী এনামুল হক অপু জানান, কুমারী ফেরীটির ভেঙে যাওয়া যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে হবে বলে একটু সময় লাগছে। আংশিক মেরামত শেষে ফেরি খানজাহান আলী চলাচল শুরু করেছে। ফেরি শাহজালালের মেরামত কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। কম সময়ের মধ্যে ফেরিটি চলাচল শুরু করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তীব্র ¯্রােতের বিপরীতে চলাচল করতে গিয়ে রুটের ফেরি গুলো ঘন ঘন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে তিনি দাবি করেন।
গতকাল সরেজমিন শুক্রবার দুপুরে ঘাট এলাকায় দেখা যায়, দৌলতদিয়ার দুইট বিশাল টার্মিনাল পরিপূর্ণ হয়ে যানবাহনের সারি মহাসড়কের অন্তত চার কিলোমিটার দুরে বাংলাদেশ হ্যাচারী ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের এক সারিতে পন্যবাহী ট্রাক আরেক সারিতে যাত্রী বাহী দুরপাল্লার বাস পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর থেকে এক সারিতে পন্যবাহী ট্রাক রয়েছে।
দক্ষিনবঙ্গের একধিক ট্রাক চালক জানান, ৩/৪দিন ধরে মহাসড়কের দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে থাকার পর তারা টার্মিনালে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। তারা আক্ষেপ করে বলেন, জানিনা কবে ফেরির নাগাল পাব। অসংখ্য পাকা মালের ট্রাক চালকরা দিনের পর দিন এভাবে ঘাটে পরে আছে বলে তারা জানান।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পারের অপেক্ষায় থাকা মাগুরা থেকে ঢাকাগামী ভাঙ্গরী মালামাল বোঝাই ট্রাকের ড্রাইভার মোঃ আবু হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘাট এলাকায় পৌছাই। কিন্তু আজ শুক্রবার দুপুর হয়ে গেলেও নদী পার হতে পারিনি। তিনি বলেন, ঘাটে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা পারের অপেক্ষায় থাকতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরীর মধ্যে ১৬টি ফেরী দিয়ে যানবাহন পারাপারের কাজ চলছে। এ নৌরুটে চলাচলরত রো-রো ফেরী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইঞ্জিন সমস্যায় বিকল হয়ে দীর্ঘ চারদিন ধরে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে।