Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলার ৪১১টি মন্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি॥নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুত প্রশাসন

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গোৎসবের বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েকটা দিন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দূর্গা দেবীকে বরণের আনুষ্ঠানিকতা। সারা দেশের মত রাজবাড়ীতেও চলছে প্রতীমা তৈরীর কাজ।
রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় ও ভিন্নধর্মী দূর্গাপূজার আয়োজন চলছে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে। সেখানে ব্যয় বহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উপহার দিতে প্রস্তুত জামালপুর আলোকদিয়া উত্তরপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী শারদীয়া দূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদ।
পুকুরের উপরে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতায় তৈরী হচ্ছে ৫টি বিশাল আকৃতির প্রদর্শনী মন্ডপ। মন্ডপগুলোতে হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীদের প্রায় ২০০টি মূর্তি প্রদর্শন করা হবে। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের কথা ইতিমধ্যে জেলার গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিগত বছরের ন্যায় এবারও হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে ছুটে আসবে বলে ধারণা আয়োজকদের। ভক্তদের বাড়তি বিনোদন দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে সড়ক ও মন্ডপের আশপাশে রঙিন বাতির অলোক-সজ্জা এবং পজা পুজা মন্ডপে সামনে তৈরী করা হচ্ছে দৃষ্টি নন্দন সব তোরণ। দুর্গতি নাশিনী দশভূজা দেবী দূর্গা এবার নৌকায় করে আসবেন আর ঘোড়ায় চড়ে বিদায় নেবেন বলে জানিয়েছেন মায়ের ভক্তরা।
প্রতীমায় রংয়ের প্রলেপসহ শেষ মূহুর্তের সব আয়োজন গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। খড়, মাটি আর রংয়ের প্রলেপে গড়ে তোলা হচ্ছে শারদীয় দূর্গোৎসবের দেবী দূর্গা, গণেশ, কর্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতীমা। দেব-দেবীর প্রায় ২০০টি মূর্তি তৈরীর মধ্য দিয়ে দূর্গাপূজার আয়োজন চলছে জোরোশোরে। পুকুরের পানির উপরে হাজার হাজার বাঁশ, কাঠ ও ৯০ মণ লোহা দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ৩/৪তলা ভবনের সমান উচ্চতার এই ৫টি মন্ডপ। মন্ডপগুলোতে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরতে দূর্গাপূজা শুরুর দিন থেকে লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে সময় নিয়ে দর্শনার্থীরা মন্ডপগুলো ঘুরে দেখতে পারে।
প্রতীমা তৈরীর শিল্পী প্রশান্ত পাল জানান, তারা গত ২মাস ধরে ১০/১২জন শিল্পী ২শতাধিক দেব-দেবীর মূর্তি তৈরী করার কাজ করে চলছেন। এখন শেষ মূহুর্তে তারা দেব-দেবীর মূর্তিতে প্রলেপ, রং ও সাজ-সজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে তাদের আশা। এবারে মূর্তিগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তিতে রং ব্যবহার করা হয়েছে। ¯েপ্রর মাধ্যমে রংয়ের কাজ করায় মূর্তিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে।
বিশাল প্যান্ডেলগুলো সুসজ্জিতকরণের দায়িত্বে থাকা মোঃ বিল্লাল জানান, তিনি তার ২৫জন শ্রমিক নিয়ে গত ২মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে মন্ডপগুলো সাজ-সজ্জা করার চেষ্টা করছেন। বিশাল আকৃতির এই মন্ডপগুলোতে প্রায় ২০হাজার বাঁশ, ৯০মন লোহা ও পেরেক, ১০হাজার সিএফটি কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।
জামালপুর আলোকদিয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী শারদীয়া দূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিধান কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, জামালপুর ও আলোকদিয়া উত্তরপাড়া গ্রামে প্রায় ২০ বছর ধরে এ পূজা হচ্ছে। এবারের পূজায় দেব-দেবীর ২০০টি মূর্তি প্রদর্শন করা হবে। দেবী দূর্গা এবার নৌকায় করে আসবেন আর ঘোড়ায় চড়ে বিদায় নেবেন।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস জানান, এবারের পূজা আমরা অনান্য বারের তুলনায় ব্যতিক্রমীভাবে মায়ের ভক্তবৃন্দের কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। ধর্মীয় কাহিনী অবলম্বনে এ পূজাটা হচ্ছে। হিন্দু ধর্মের উপরে আলোকপাত করেই এ পূজার আয়োজন। বালিয়াকান্দির এ পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মায়ের ভক্তরা আসেন। দূর্গাপূজা শুরুর দিন থেকে লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছে। আশা করি, ভালোভাবেই পূজা সম্পন্ন করতে পারবো।
রাজবাড়ীর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান জানান, জেলায় এবার ৪শতাধিক মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, গ্রাম পুলিশ এবং নারী ও পুরুষ আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এদের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা জ্যাকেট পড়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গা পূজা উদযাপনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি জেলাবাসীর প্রতি আহবান জানান।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে, দূর্গাপূজা উপলক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে ভ্রাম্যমান আদালতের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করবে। এ বছর রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলার মোট ৪১১টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় (পৌরসভাসহ) ৯৯টি, গোয়ালন্দ উপজেলায়(পৌরসভাসহ) ২২টি, পাংশা উপজেলায় (পৌরসভাসহ) ৯১টি, কালুখালী উপজেলায় ৫৩টি এবং বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৪৬টি পূজা মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।