Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বেহাল দশার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার মহাসড়ক॥ঈদযাত্রায় ব্যাপক দুর্ভোগ

॥এম.এইচ আক্কাছ॥ চলতি বর্ষা মৌসুমের টানা বর্ষণ ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে রাজবাড়ী জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ ৮৭কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক। এতে চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রী, পরিবহন চালক ও ঈদে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রীরা। ঈদের আগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারের জন্য সরকারী নির্দেশনা থাকলেও এ এলাকায় তেমন কোন কাজ হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত প্রায় ১মাসের টানা বর্ষণে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর থেকে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের ১৬কিলোমিটার অংশের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর সড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে পাংশা উপজেলার শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত ৪৫কিলোমিটার, বাগমারা-জৌকুড়া পর্যন্ত সাড়ে ৬কিলোমিটার ও রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়কের ২০ কিলোমিটার রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরী হয়েছে বড় আকারের গর্ত। রাস্তার অনেক স্থানে পিচ জমে উঁচু ঢিবি’র মতো তৈরী হয়েছে। এরমধ্যে ফেলুর দোকান, কল্যাণপুর ব্র্যাক কার্যালয় থেকে নতুন রাস্তা, রাজবাড়ী জুট মিল এলাকা, আহলাদীপুর ব্রীজ, রাজবাড়ীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল শ্রীপুর, সদর উপজেলা পরিষদের সামনে, রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের সামনে, কামনা বিল্ডিংয়ের সামনে, পাবলিক হেলথ মোড়, বড়পুল মোড়, নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড, বাগমারা মোড়ের আগে, চন্দনী ব্রীজসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। গর্তের জন্য ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
গত ঈদের আগে মহাসড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ করলেও বৃষ্টির কারণে এক মাস যেতে না যেতেই অত্যন্ত বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাস ধরে এসব সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহন চলাচলে দুরবস্থা এবং যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, দক্ষিণের বরিশাল, খুলনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলার যানবাহনগুলো আলাদা আলাদা মহাসড়ক হয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে এসে এক সড়কে মিলিত হয়। যে কারণে অন্যান্য মহাসড়কের চেয়ে সড়কে যানবাহনের চাপ থাকে বেশী।
অপরদিকে, ফেরী ঘাটে পৌঁছে আগে ফেরীর নাগাল পেতে চালকেরা এক প্রকার গতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এই এলাকায়। যে কারণে কয়েক দফা কাজ করেও এ এলাকাটি ঠিক রাখা যাচ্ছে না।
এদিকে মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮৫মিটার এলাকা ডিভাইডারসহ ফোর লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হতে না হতেই অন্তত ৬স্থানে ধসে যায়। ঠিকাদার সেগুলো জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করছে। এর বাইরে সওজ’র কর্মীরা মহাসড়কের বড় বড় গর্তগুলো সামায়িকভাবে ইট-খোয়া ও হালকা বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করলেও ছোট গর্তগুলো সেভাবেই থেকে যাচ্ছে। বৃষ্টির সাথে সাথে চাকার ঘর্ষণে ছোট গর্তগুলো ক্রমান্বয়ে আবার বড় হচ্ছে।
এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী কুষ্টিয়ার বাস চালক আঃ মতিন মিয়া, ছালাম শেখ, রাজবাড়ীর বাস চালক সুলতান মিয়া, ট্রাক চালক ফরিদ সেখ, গোয়ালন্দের ট্রাক চালক আঃ কাদের, প্রাইভেট কার চালক সুমন মিয়াসহ অনেকেই জানান, সম্প্রতি এ সড়ক দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাগুলোর উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের লক্ষে ৫০/৬০ টন ওজনের বড় বড় পাথর ভর্তি ও বালু ভর্তি ১০ চাকার ট্রাক চলাচল করছে।
একই সাথে ওই ট্রাকের সাথে পাল¬া দিয়ে জেলা সদরের জৌকুড়া ফেরী ঘাট থেকে নিয়মিত ৩০ থেকে ৩৫ টন ওজনের বালু ভর্তি ট্রাক বিভিন্ন স্থানে বালু পরিবহন করছে। বালু এবং পাথর ভর্তি ট্রাকগুলোর কারণে এ সড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। প্রায়ই গাড়ীর এক্সেলসহ নানা যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে আটকে যাচ্ছে এ সড়কের উপরে। এই সকল ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা অথবা বাড়তি ওজনের জন্য বাড়তি টোল আদায়ের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক সুত্র জানায়, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি ২২ থেকে ২৫টন পর্যন্ত মালামাল পরিবহনযোগ্য। অথচ ৬ চাকার ১৫ টন ওজনের ট্রাকে বালু লোড দেয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টন এবং ১০ চাকার সাড়ে ২২ টন ওজনের ট্রাকে লোড দেয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টন ওজনের পাথর। ফলে এ সড়কটির বিভিন্ন স্থান উঁচু-নীচু হওয়ার পাশাপাশি ভেঙ্গে তা ক্রমশই চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা কোনভাবেই ঈদের আগে পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব নয়। তবে বিভাগীয় ব্যবস্থাপনায় জেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম বসন্তপুর হতে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকার গর্তগুলো ভরাট করা হয়েছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য জায়গাতেও কম-বেশী কাজ করা হয়েছে। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে কাজ ধরে রাখা কষ্টকর হচ্ছে। এ সকল কাজে গত ছয় মাসে কমপক্ষে ৬০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। তাছাড়া জেলা শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০০ মিটার সড়ক ইট দিয়ে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। মেরামতকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, রাজবাড়ী শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ৪.১ কিলোমিটার সড়ক ফোরলেন করার টেন্ডার হয়েছে। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হলে জেলা শহরের চেহারাই পাল্টে যাবে। শ্রীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ৭.৭ কিলোমিটার সড়ক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে তৈরী করা হবে। নতুন বাজার থেকে কুষ্টিয়ার সীমান্ত শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার সড়ক ২২২ কোটি টাকা এবং বাগমারা থেকে জৌকুড়া ফেরী ঘাট পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার সড়ক ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রাস্তার এ কাজগুলো সম্পন্ন হলে জনগণের ও যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগই থাকবেনা বলে তিনি জানান।