Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দে ঈদের আগে মেজেক আলী ও অন্ধ ভিক্ষুক দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হলো নতুন শাড়ি ও লুঙ্গি

॥মঈনুল হক মৃধা॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফকির পাড়া এলাকায় প্রায় ২০দিন ধরে পানিবন্দি দিন মজুর মেজেক আলী মন্ডল(৭৫)। এ পর্যন্ত তাদেরকে কেউ খোঁজ নেয়নি। ঈদের আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া নতুন একটা লুঙ্গি বন্ধুসভার সদস্যদের হাত থেকে পেয়ে তিনি বেজাই খুশি।
মেজেক আলী মন্ডল বলেন, “বাড়ির চারপাশে পানি আর পানি। মেলা দিন দইরা আইটকা আছি। কেউ একবার আইস্যা খোঁজ নিলনা। তোমরা আমারে খুইজা ইদের আগে নতুন লুঙ্গি দিলা। কি যে উপকার করলা বাবারা। দোয়া করি, আল্লাহ তোমাগোয় আরো দিব”।
একই ইউনিয়নের ফেলু মোল্লার পাড়ায় এখনো পানিবন্দি অন্ধ ভিক্ষুক দম্পতি আহম্মেদ শেখ(৭৫) ও স্ত্রী মাহাতন নেছা(৬৫)। গতকাল দুপুরে বাড়িতে গিয়ে বন্ধুসভার সদস্যরা মাহাতুন নেছার হাতে নতুন একটা শাড়ি ও আহম্মেদ শেখের হাতে একটা লুঙ্গি। ঈদের শাড়ি-লুঙ্গি পেয়ে ভিক্ষুক দম্পতি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নতুন কাপড় পেয়ে আহম্মেদ শেখ বলেন, “অইজ কত দিন ধইরা পানিবন্দি হইয়া আছি। মধ্যিখানে একবার একটা স্লিপ পাইছিলাম। তারপর আর কিছুই পাইনি। বাবাগো আমি দেখতে পায়না। তোমরা আমাগো যা দিছো তাতেই খুশি। দোয়া করি তোমরা বড় হও”। গতকাল এভাবেই উজানচর, দৌলতদিয়া, ছোট ভাকলা ইউনিয়ন এবং পৌরসভা এলাকার ১০৫টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া নতুন শাড়ি ও লুঙ্গি।
গতকাল সকালে পৌরসভার বদিউজ্জামান বেপারী পাড়া এলাকার একটি মেহগনি বাগানে পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের ৯০টি পরিবারের হাতে বন্ধুসভার সদস্যদের সহযোগিতায় তুলে দেওয়া হয় একটি শাড়ি ও লুঙ্গি। এছাড়া একাজ শেষেই দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পানিবন্দি ১৫টি পরিবারে গিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় শাড়ি ও লুঙ্গি।
পৌরসভার আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা বাবর আলী শেখ(৮০) বলেন, “অহন পর্যন্ত কেউ কিচ্ছু দেয়নি। এই পরথম একটা তপন(লুঙ্গি) পায়লাম। চলতে পারিনা বাবা। নতুন তপনখান পাইয়া বালই লাগছে”। শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মুরুব্বি আলহাজ¦ মো. আজিজুল হক, বন্ধুসভার উপদেষ্টা অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, সভাপতি শেখর আহম্মেদ বাবু, সাধারণ সম্পাদক রমেশ কুমার আগরওয়ালা, সদস্য আকাশ সাহা, মঈনুল হক মৃধা, রবিউল ইসলাম ও প্রথম আলো প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক। আজ বুধবার উপজেলার বন্যা দুর্গত দেড় শতাধিক পরিবারের মাঝে ঈদের বাজার করে দেওয়া হবে। এর আগে উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকার ১৬২টি পরিবারের মাঝে চাউল, ডাল, সয়াবিন তেল, চিড়া, খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, দিয়াশলাই ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করা হয়।