Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

আন্তঃনগরের পরিবর্তে চলবে লোকাল ট্রেন॥রাজবাড়ী-ফরিদপুর রুটের সব স্টেশনেই থামছে ট্রেন

॥আশিকুর রহমান॥ রাজবাড়ী-ফরিদপুর রুটের ৫টি রেল স্টেশনেই এখন থেকে ট্রেন থামছে। এতোদিন এই রুটে চলাচলকারী একমাত্র আন্তঃ নগর ট্রেনটি মাত্র ২টি স্টেশনে থামতো। গত ১৫ই আগস্ট থেকে প্রতিটি রেলস্টেশনে ট্রেনের যাত্রা বিরতি শুরু হয়েছে।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের মাস্টার এস.এম কামরুজ্জামান জানান, অব্যবস্থাপনা ও লোকসানের কারণে রেল কর্তৃপক্ষ ১৯৯৮ সালের ১৫ই মার্চ ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেল রুটটি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীকালে এ অঞ্চলের মানুষের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১০ই মার্চ থেকে এ রেল রুটে নতুন করে কাজ শুরু করা হয়। ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪বছর ধরে পুনরায় তৈরী করা হয় রেল লাইন ও ৫টি লোকাল স্টেশন। এরপর ২০১৪ সালের ৭ই আগস্ট একটি আন্তঃ নগর ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পুনরায় চালু করা হয় রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেল যোগাযোগ। কিন্তু-পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ওই একটি ট্রেনই সকাল ৮টার দিকে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যেতো এবং ১০টার দিকে ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ী ফিরে আসতো। এ রুটের ৫টি লোকাল স্টেশনের মধ্যে শুধু পাঁচুরিয়া ও আমিরাবাদ স্টেশনে ট্রেনটি থামতো। বাকী খানখানাপুর, বসন্তপুর ও অম্বিকাপুর স্টেশনে ট্রেনটি থামতো না।
তিনি আরও জানান, এ ৩টি স্টেশনে ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন এ অঞ্চলের মানুষেরা। অবশেষে গত ১০ই আগস্ট রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ রুটে আন্তঃনগর ট্রেনটি উঠিয়ে নিয়ে নিয়মিত একটি মেইল ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনা অনুযায়ী মেইল কোচ না থাকায় গত ১৫ই আগস্ট থেকে আন্তঃ নগর ট্রেনটিই মেইল ট্রেন হিসেবে চালানো শুরু হলো। ট্রেনটি রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেল রুটের ৫টি লোকাল স্টেশনেই যাত্রা বিরতি করবে। পরবর্তীকালে মেইল কোচ এলে সেটিই চালানো হবে। মেইল ট্রেনে রাজবাড়ী-থেকে ফরিদপুরের ভাড়া যাত্রী প্রতি ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে যে স্টেশনেই যাত্রী নামুক ভাড়া ১৫ টাকাই হবে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা এলে স্টেশন ভেদে ভাড়া কমানো হতে পারে।
দীর্ঘ ২০ বছর পর এসব স্টেশনে ট্রেন থামায় এসব অঞ্চলের মানুষ উৎফুল্ল হয়েছে। খানখানাপুর রেলগেট এলাকার ফটোকপি ও স্টুডিও দোকানী শামসুর রহমান পলাশ বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো খানখানাপুর স্টেশনে ট্রেনের যাত্রা বিরতির। এজন্য আমরা অনেক আন্দোলনও করেছি। আজ থেকে ট্রেনের যাত্রা বিরতি শুরু হয়েছে। এখন রাজবাড়ী ও ফরিদপুর থেকে ট্রেনে করে আমাদের ব্যবসার মালামাল আনতে অনেক সুবিধা হবে। এছাড়া আমাদের ভাই-বোনদের কলেজে যাতায়াতেও অনেক সুবিধা হবে।
বসন্তপুর বাজারের ইলেক্ট্রনিক্স দোকানী রাফেজুর রহমান রানা বলেন, ২/১ দিন পর পরই আমাকে দোকানের মালামাল আনার জন্য রাজবাড়ী ও ফরিদপুর যেতে হয়। বাসে বা অটোতে যাতায়াত করতে খরচ বেশী এবং ভাঙা সড়কের কারণে ঝুঁকিও অনেক। এখন থেকে ট্রেনে অনেক সহজে যাতায়াত করতে পারবো।
ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বসন্তপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহান মোল্লা বলেন, আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করেছিলাম যাতে বসন্তপুর স্টেশনে ট্রেন থামে। আমার দোয়া কবুল হয়েছে। এখন থেকে খুব সহজেই ট্রেনে চড়ে নিয়মিত কলেজে যেতে পারবো। এ আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।
স্টেশনে ট্রেন থামায় এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের অনুভূতিই ঠিক একইরকম। অনেকেই ট্রেন থামার আনন্দে ব্যক্তিগতভাবে মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করছেন।
এমনই একজন বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী কামাল ফকীর। তিনি বলেন, আমাদের প্রাণের দাবী ছিলো যাতে বসন্তপুর স্টেশনে ট্রেন থামে। ট্রেন থামার আনন্দে মানুষকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছি।