Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৩ই আগস্ট সকাল ১০টায় অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় কমিটির উপদেষ্টা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, কমিটির সদস্য পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, নৌ-পুলিশ সুপার (ফরিদপুর অঞ্চল) মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর সদ্য যোগদানকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিঃ আমজাদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুর রহমান, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী তার বক্তব্যে বলেন, এই মাস জাতীয় শোকের মাস। কারণ এই মাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানী ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, আগামী ১৫ই আগস্ট জাতির জনকের শাহাদত দিবসে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী সেই ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে যে কোন প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে পারে। সেই জন্য এই মাসে জেলার আইন-শৃঙ্খলার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া ঘাটে যাতে কোন প্রকার যানজট না হয় সে বিষয়ে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ জন্য আসন্ন ঈদের আগে ও পরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১৮টি ফেরী সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে পদ্মা নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গনের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট হুমকীর মুখে। সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে সরকার এই ঘাটের স্থায়ী ভাঙ্গন প্রতিরোধকল্পে প্রায় ৮শ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যাতে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে স্থায়ী ভাঙ্গন সমস্যার সমাধান করা যায়।
এমপি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী আরো বলেন, রাজবাড়ী জেলার নদীর স্থায়ী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ৩৪২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নদীর পাড়ে যে বালুর পাহাড় বানানো হয়েছে সেগুলোর কারণে যাতে ভাঙ্গন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ না করে সেই জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত লোড নিয়ে ট্রাক চলাচল। এই রাস্তা যাতে আর নষ্ট না হয় সেই জন্য অতিরিক্ত লোড নিয়ে চলাচলকারী ট্রাকের চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজবাড়ীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চালকদের হেলমেট ব্যবহার না করার দায়ে অতিরিক্ত জরিমানা করাসহ, দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়ী পারাপরের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের আর কোন অভিযোগ না উঠে সে বিষয়ে তিনি পুলিশ সুপার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানান।
তিনি বলেন রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজার ঘাট থেকে লালগোলা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড়ের অনেক জায়গায় বালু রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময় বালু সরানোর কথা বলা হলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকের প্রতি আহবান জানান। এছাড়াও তিনি ধাওয়াপাড়ায় বিভিন্ন ট্রাক থেকে পুলিশের চাঁদাবাজী বন্ধ, রাজবাড়ী বাজারের জমে থাকা পানি অপসারনে বিশেষ ব্যবস্থা, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ, শিক্ষকদের কোচিং না করানো, নদীর পাড়ে স্তুপ করে বালু রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জাতীয় শোকের মাস। কারণ এই মাসে আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শাহাদতবরণ করেছিলেন। এই জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আমি আশা করব, জেলার সকল সরকারী বিভাগের কর্মকর্তাগণসহ এই শোক দিবসের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করবেন। আপনারা সকলেই জানেন কিছুদিন আগে দেশের সকল জেলার জেলা প্রশাসকদের নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সম্মেলনে রাজবাড়ী জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জেলা প্রশাসকের একান্ত সভা হয়েছিল। সেই সভায় প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পানি সম্পদ মন্ত্রী, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সাথেও আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন না করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন জায়গায় যে বালু উত্তোলন করা হয় সেটি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে বালু উত্তেলনে কোন ইজারা দেওয়া হবে না। যদি কোন ইজারা প্রদান করা হয় তবে নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। নদীর পাড়ে যে বালুর স্তুপ আছে সেগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি নির্দেশ প্রদান করেন। আসন্ন ঈদে দৌলতদিয়া ঘাটে যাতে ৪টি ঘাট দিয়ে গাড়ী পারাপার করা করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি সড়কে ট্রাকে চাঁদাবাজী বন্ধ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করা, ট্রাকের বাম্পার অপসারণ, হাইওয়েতে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করা, মহাসড়কে গরুর হাট, বাজার অপসারণ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানান।