Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসকে শিশুদের জানানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা প্রতিষ্ঠিত — প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ‘আমরা সজীব আমরা মুজিব, আমরা শান্তির পৃথিবী গড়ে তুলব’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা রাজবাড়ী জেলা শাখার আয়োজনে গতকাল ২৮শে জুলাই দিনব্যাপী জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি মোঃ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার জেলা শাখার প্রধান পৃষ্ঠপোষক মহম্মদ আলী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার জেলা শাখার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী রন্টু, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশারফ হোসেন পাকবীর, কেন্দ্রীয় সভাপতি মিয়া মনসফ ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মোহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সাংস্কৃতিক সম্পাদক আরিফুজ্জামান চয়ন।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা শিল্পকাল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আসীম কুমার পাল, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল বাশার মিয়া, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফকীর মোহাম্মদ আবু তালেব এবং অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক পি.এম নাজমুল হক রাজীবসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির সদস্যগণ, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরগণ ও তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আজকে রাজবাড়ীতে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার আয়োজনে সারা দিনব্যাপী শিশুদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা হয়েছে এতে যারা অংশ নিয়ে ও যে সমস্ত অভিভাবকগণ আজকে সারাদিন তাদের সন্তানদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা বঙ্গবন্ধুর নিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের একটা আলাদা মূল্যায়ন আছে বলে আমি মনে করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা এদেশী কিছু স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপন্থী ষড়যন্ত্রকারীর হাতে নিহত হয়েছিলেন তখনই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর নাম-চিহ্ন সব জয়গা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। এজন্য তারা আমাদের মহান স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস বিকৃত করে নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা তৈরী করতে চেয়েছিল। তাদের সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে আজ থেকে ২৭বছর পূর্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর আসল ইতিহাসকে শিশুদের তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এই সংগঠনটি জাতির জনকের জীবনের ইতিহাস এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশু কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে। যার মাধ্যমে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা বড় হয়ে রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবে তারা বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে পারে এবং নিজেদেরকে একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। যাতে তার বাবা মহান স্বাধীনতার স্থাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি আগামীর প্রজন্ম আমাদের শিশুদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম আরো জাগ্রত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সেটি করতে পারলে তার ভিশন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে তার বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলা বা উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এছাড়াও তিনি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস, ডিজিটাল বাংলাদেশ, মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহসহ বিভিন্ন বিষয় তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অটিজম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সম্মান উচ্চে তুলে ধরতে বিভিন্ন ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের বুকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ ২৭ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা বিভিন্ন চড়াই পেরিয়ে আজ রাজবাড়ীতেও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমি আশা করব তারা আরো উদ্যোগী হয়ে তাদের এই সংগঠনের মাধ্যমে এ জেলার নতুন প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দেবে। আমি রাজবাড়ীতে এই সংগঠনের সাফল্য কামনা করি।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, দীর্ঘ ২৭বছর বিভিন্ন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে হাটি হাটি পা পা করে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা আজকে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারণে। তিনি আজ থেকে ২৭বছর আগে আমাকে ডেকে নিয়ে রাজবাড়ীতে এই সংগঠনের কার্যক্রম চালানোর জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলেই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আজকে এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। আজকে এই সংগঠনের সাফল্য দেখে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। তিনি এই সংগঠনের সকলকে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে বুকে ধারণ করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জনান।
আলোচনা পর্বের শেষে নাচ, গান, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার ১১টি ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী ৩শত জন প্রতিযোগীর মধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারী প্রতিযোগীদের প্রধান অতিথির মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এই বিজয়ী প্রতিযোগীগণ ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ইকবাল সোবহান চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে দুপুর সোয়া ২টায় রাজবাড়ী সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছালে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানোয়ার হোসেন মোল্লা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান ও দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন এবং রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বিষয়ক ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।