॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে গতকাল ২২শে জুলাই বেলা ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এবং সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজিবের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রাকিব হাসান সোহেল।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম রানা, জেলা ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম রুবেল, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সামসুল সালেহিন অপু, গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ চৌধুরী, রাজবাড়ী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি শাওন মিয়া টাইসন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম এরসাদ।
এ সময় জেলা ছাত্রলীগ, সদর উপজেলা ও গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগ এবং রাজবাড়ী পৌর ছাত্রলীগসহ রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজবাড়ীর বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিএনপি-জামাত ও হাইব্রিডদের বহিষ্কার সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন। ১৯৪৮ সালের পর থেকে হাটি হাটি পা পা করে ৭৯ বছর মহান ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৯০ এর স্বৈরাচারী সরকার পতনের আন্দোলনসহ বিএনপি-জামাত সরকারের শাসন আমলের বিভিন্ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আজকে এই পর্যায়ে এসেছে। এই ছাত্রলীগের জন্মলগ্ন থেকে যারা এর নেতৃত্ব দিয়েছে তারা সকলেই লেখাপড়া জানা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। তাই আজকে যারা ছাত্রলীগ করছে তাদের সকলকেই ছাত্রলীগের ইতিহাস জানতে হবে। এর জন্য তাদেরকে লেখাপড়ার জানতে হবে ও বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। বর্তমানে রাজবাড়ীতে ছাত্রলীগের অনেক নেতৃবৃন্দ আছে যারা পড়াশোনা কম জানার কারণে ঠিকমত বক্তব্য দিতে পারে না। আমি আশা করব তারা পড়াশোনা করে নিজেদের ভবিষ্যতের বড় নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করতে সমর্থ হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে একটি কমিটি করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে জেলা ছাত্রলীগের প্রেরিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন না দিয়ে সেখান থেকে অনেকের নাম বাদ দিয়ে ছাত্র নয়, বিবাহিত ও জামাত-বিএনপির ছাত্র সংগঠন করা অনেককের নাম কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ও শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতেও বিএনপি-জামাতের রাজনীতি করা কিছুৃ ছাত্রের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। রাজনৈতিক সুবিধাভোগী দলের এসব ষড়যন্ত্রকারী গুটি কয়েক নেতার কারণে বিএনপি-জামাতের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নাম ছাত্রলীগের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করব বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনা করে এসব জামাত-বিএনপির ছাত্র সংগঠনের জড়িতদের নাম বাদ দিয়ে তাদেরকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে ত্যাগী ও যারা ছাত্রলীগের জন্য কাজ করে তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে তাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ এর সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সকলে যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি ও বর্তমান সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড যদি জনগণের কাছে তুলে ধরি তবে আমি মনে করি জনগণ আবার শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে নৌকা প্রতিকে ভোট দিয়ে তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করবেন। এর জন্য আমাদের নিজেদের ভেতরে কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করে প্রধানমন্ত্রী যাকে রাজবাড়ী-১ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত করবেন আমরা সকলে তার নির্বাচন করব।
তিনি জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামীতে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে তার প্রাণপ্রিয় সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী বলেন, শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি এই তিন মূলমন্ত্রের উপর ভিত্তি করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে তার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র সংগগঠন ছাত্রলীগ গঠন করেছিলেন। এ কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যা এক দিনের সংগঠন নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠনটি তার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। আর এই ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য নিজের ও তার পরিবারের সকল সদস্যের রক্ত দিতে হয়েছিল। যে যতবড় নেতাই হন বঙ্গবন্ধুর হতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে কোন নোংরা রাজনীতি কখনো কোন অবস্থাতেই ছাত্রলীগ মেনে নেবে না। আপনারা ঘরে বসে যে দুই একজন নেতার তদবীরে জেলা আওয়ামী লীগের কোন মতামতের তোয়াক্কা না করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশ করা কমিটির নেতৃবৃন্দের নাম বাদ দিয়ে জামাত-বিএনপির রাজনীতি করা যে সকল বিবাহিত, অছাত্রদের নাম ঢুকিয়ে কমিটি অনুমোদন করেছেন জেলা ছাত্রলীগ কখনও সেটা মেনে নেবে না। এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এক ও ঐক্যবদ্ধ আছে। এখনও সময় আছে সাবধান হয়ে যান। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী যে জামাত-শিবির বর্তমানে সংগঠনে নিজেদের পরিচয় গোপন করে দলে ঢুকেছে তারাই বঙ্গবন্ধুর সংগঠনের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদেরকে যে কোন মূল্যে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও তিনি সকলকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ রাজবাড়ী-১ ও রাজবাড়ী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাজবাড়ী জেলায় সকল ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় যে উন্নয়ন সাধন করেছেন তা সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে সকলকে উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে যাকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দিবেন জেলা আওয়ামী লীগসহ এর সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীকে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
এছাড়াও সভার সভাপতি, বিশেষ অতিথি ও অন্যান্য বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে ছাত্রলীগের কমিটিতে জামাত-শিবির ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন করা নব্য ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ হাইব্রিড নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানান।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রাকিব হাসান সোহেল তার বক্তব্যে বলেন, কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় বিএনপি-জামাত ও হাইব্রীড নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অনেককে মৌখিকভাবে বহিষ্কারও করা হয়। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।