॥স্টাফ রিপোর্টার॥ কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সেনা সদর দপ্তর।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনে মন্তব্যকারীরা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন দোষী ডেভিড বার্গম্যান, মাদকাসক্তির অভিযোগে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি থেকে বহিস্কৃত সাবেক ক্যাডেট জুলকারনাইন সায়ের খান (প্রতিবেদনে সামি হিসেবে আলোচিত) এবং অখ্যাত নেত্র নিউজ-এর প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল। তাদের অতীত কর্মকান্ড এটাই প্রমাণ করে এ সকল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একত্রিত হয়েছে।
এটি স্পষ্ট নয় যে কীভাবে আল-জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল একদল অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিবর্গের সাথে কাজ করছে, যারা পূর্বে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারী, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত বিষয়ের ভিডিওক্লিপগুলি একসাথে করে ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন অসংগত বিষয়সমূহ একত্রিত করে নেপথ্যকণ্ঠ দিয়ে একসাথে যা সম্পাদিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইজরাইল থেকে মোবাইল ইন্টারসেপ্টর ডিভাইস সংগ্রহের বিষয়ে প্রদত্ত ভ্রান্ত প্রতিবেদনেরও তীব্র প্রতিবাদ করছে। প্রকৃত সত্যটি হল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েনের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর একটি কন্টিনজেন্টের জন্য হাঙ্গেরি থেকে এসব সরঞ্জামসমূহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। বাস্তব সত্য হলো সরঞ্জামগুলি ইজরাইলের তৈরি নয়। ইজরাইলের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা/সংগ্রহের সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের সাথে এই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করে এটা দেশের বিকাশ ও অগ্রগতির পথে বাঁধা সৃষ্টি এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসমূহের মধ্যে চলমান সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে স্বার্থন্বেষী মহলের অপচেষ্টা। সেনাবাহিনী বর্তমান চেইন অফ কমান্ডের অধীনে সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত ও পেশাদার বাহিনী এবং সংবিধান ও সরকারের প্রতি অনুগত। সেনাবাহিনী সর্বদা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল ও থাকবে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ও দেশ গঠনের প্রয়াসে অবদান রাখবে।
অপরদিকে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় গত সোমবার প্রকাশিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিকে ‘মিথ্যা ও অবমাননাকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
গতকাল ২রা ফেব্রুয়ারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এটিকে লন্ডন ও অন্যান্য জায়গায় সক্রিয় ‘উগ্রপন্থী ও তাদের সহযোগীদের উস্কানিতে ‘বেপরোয়া ও নোংরা অপপ্রচার’ উল্লেখ করে বলা হয় বাংলাদেশ সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই প্রতিবেদন একগুচ্ছ বিভ্রান্তিকর শ্লেষ আর বক্রোক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আসলে চরমপন্থী গোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু কুখ্যাত ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ‘অপপ্রচার’।
এতে বলা হয়, এরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই এ রাষ্ট্রের প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে আসছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা দুঃখিত যে আল-জাজিরা নিজেকে বাংলাদেশে অসামান্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রতির রেকর্ডধারী একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সরকারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে তাদের এ হীন রাজনৈতিক চক্রান্তের হাতিয়ারে পরিণত হতে দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আল জাজিরার প্রতিবেদনের অভিযোগসমূহের মূলসূত্র একজন সন্দেহভাজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল জাজিরা নিজেই ‘সাইকোপ্যাথ’ আখ্যা দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী বা বাংলাদেশের রাষ্টীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই বিশেষ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার সামান্যতম প্রমাণও নেই। আর মানসিক ভারসাম্যহীন কারো কথার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলের জন্য চরম দায়িত্বহীনতা।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রতিবেদনের ঐতিহাসিক বিবরণে ১৯৭১ সালের নৃশংস গণহত্যার কথা এমনকি উল্লেখও করা হয়নি। জামায়াতের অপরাধীরা সে সময় লাখ লাখ বেসামরিক বাঙালিকে হত্যা করে এবং ২লাখের বেশি নারীকে ধর্ষণ করে। এটি প্রতিবেদনের রাজনৈতিক পক্ষপাতের প্রতিফলন।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনের প্রধান ভাষ্যকার ডেভিড বার্গম্যানের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট কতিপয় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অপরাধী এবং কুখ্যাত ব্যক্তি তাদের চিরাচরিত ছকে যে ধরনের বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালায় এই রিপোর্টটিও সেই শ্রেণীর। এরা বিভিন্ন উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’