Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ধর্মীয় বিভ্রান্তি দূর করে ইসলামের প্রকৃত বাণী প্রচারের জন্য ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে পরিকল্পিত মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ মধ্যে প্রায় ১৭০টি উদ্বোধন করা হবে।
৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক মোঃ নজিবর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিন দফায় মোট ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।’
এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে আসন্ন রমজানের আগে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে এবং সেপ্টেম্বর মাসে আরও ৬০টি এবং ডিসেম্বর মাসে ৬০ টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক নজিবর রহমান বলেন, ইসলামের চেতনায় অনুপ্রাণিত এবং জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মাণের ধারণা গ্রহণ করেন, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর পরে নিজস্ব তহবিলে বাস্তবায়িত এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প উল্লেখ করে নজিবর রহমান বলেন, ‘এটি বিশ্বে প্রথম কোন সরকার একই সময়ে এই বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণ করছে।’
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ইসলামের ভ্রাতৃত্ব এবং মূল্যবোধের প্রচার এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী প্রচার করা। ইসলাম কখনোই উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না।
বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইন ১৯৭৫ কার্যকর করেছিলেন উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, দেশব্যাপী মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ইসলামী সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।
তিনি বলেন, সরকারের প্রচারমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও এটি ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ৪২০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং বাকি মসজিদগুলোর কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
প্রকল্পের বিবরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী এ,বি ও সি এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ৫৬০টি মসজিদ-কাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জেলা ও সিটি কর্পোরেশনগুলো জন্য এক ধরণের এবং উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য দুই ধরনের মডেল নির্বাচন করেন। জেলা ও সিটি কর্পোরেশনের মসজিদের জন্য ১৫ কোটি ৬১ লাখ এবং উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোর জন্য ১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এলিভেটর সুবিধাসহ ৪তলা বিশিষ্ট ৬৪টি মসজিদ ‘এ’ ক্যাটাগরিতে প্রায় ৬৯টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্মিত হবে, প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন হবে ২,৩৬০.০৯ বর্গ মিটার।
‘বি’ ক্যাটগরির ৪৭৫ টি মসজিদের প্রতিটির ফ্লোরের আয়তন হবে ১,৬৮০.১৪ বর্গ মিটার এবং সি ক্যাটাগরির ১৬টি মসজিদ উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হবে, এ গুলোর প্রতিটির ফ্লোরের আয়তন হবে ২,০৫২.১২ বর্গ মিটার।
প্রতিটি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদে একসাথে ১২০০ লোক নামাজ আদায় করতে পারবেন, উপজেলা ও উপকূলীয় মডেল মসজিদের প্রতিটিতে একসাথে ৯০০ লোক নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং প্রায় ৪ লাখ ৯৪ হাজার পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ নারী একত্রে নামাজ আদায়ে সক্ষম হবেন।
মডেল মসজিদগুলোতে ইসলামী গবেষণা ও দীন-ই দাওয়াহ কার্যক্রম, কুরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, মৃতদেহ দাফনের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের সমাবেশ ও প্রশিক্ষণের সুবিধা থাকবে। ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য কার পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।
এসব মসজিদে লাইব্রেরী সুবিধা থাকবে, সেখানে একসাথে প্রায় ৩৪ হাজার লোক পবিত্র কোরআন তেরাওয়াত এবং ইসলামিক বই পড়তে পারবেন।
প্রকল্প কাজ শেষে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ লোক ইসলামিক বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন, প্রায় ৫৬ হাজার লোক দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারবেন।
অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকান্ডের বাইরেও ১ লাখ ৬৪ হাজার শিশু প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। এ সব মসজিদ থেকে প্রতিবছর ১৪ হাজার কোরআনে হাফেজ হবেন।
এছাড়াও পবিত্র হজের ডিজিটাল নিবন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার ২৪০ জন দেশী-বিদেশী অতিথির আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।