॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ফেরী ও লঞ্চ ঘাটে ঈদে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে শুরু হওয়ায় পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং শুরু হয়েছে।
গতকাল ২৩শে জুন দুপুর থেকে ঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৮টি ফেরী এবং ২৮টি লঞ্চ যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। যাত্রী ও যানবাহন চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম চলছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক(বাণিজ্য) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৯টি ফেরী দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারকরা হচ্ছে। অচিরেই আরো একটি ফেরী এই রুটে সংযুক্ত হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও যান্ত্রিক ত্র“টি দেখা না দিলে ফেরী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে আলামিন শিপিং লাইন্সের ম্যানেজার এম.এ সেলিম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ২৮টি লঞ্চ চলাচল করছে। লঞ্চে পারাপারে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কোন অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। এতদিন যেমন ২৫টাকা ভাড়া ছিল, ঈদের সময়েও তাই থাকছে।
দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘœ করতে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নেয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গত ২১শে জুন দুপুরে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ জেলা পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহন চালকদের মধ্যে সচেতনতামূলক বিতরণ করেন এবং তাদের সাথে সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি ঘাট এলাকার বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক ফেস্টুনও লাগান। পরে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘœ করতে এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঈদের তিন দিন আগে থেকে ঈদের তিন দিন পর পর্যন্ত এপিবিএন, আনসার, পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় নিয়োজিত থাকবে। নৌ-পথের নিরাপত্তার জন্য স্পীডবোটসহ ইঞ্জিন চালিত ট্রলারযোগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে প্রতিটি ফেরীতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও দেয়া থাকবে। স্বাভাবিক সময়ে পরিবহনগুলোতে যে ভাড়া আদায় করা হয়, ঈদের সময়ও একই ভাড়া আদায় করা হবে। কোন প্রকার বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় তার সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল কান্তি দাস, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল, গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মন্ডল এবং বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাগণসহ ঘাট সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে গত ২০শে জুন বিকালে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্মিত ‘হেল্প ডেস্কে’ ঘাট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জরুরী সভা করেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানোয়ার হোসেন মোল্লা, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম এবং গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসন, গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক জানান, ঈদের সময় দৌলতদিয়ার ৪টি ফেরী ঘাট সার্বক্ষণিক সচল রাখতে সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। লঞ্চ ঘাট ও ১নম্বর ফেরী ঘাটের মাঝে নতুন ফেরী ঘাটের সংযোগ সড়কের কাজও প্রায় শেষের দিকে। ঈদের আগে অন্তত ১টি ফেরী ঘাট চালু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ঘাট এলাকায় ঈদের সময় ৪টি ভ্রাম্যমান আদালত সার্বক্ষণিক কাজ করবে। ঈদকে পুঁজি করে যাতে কেউ লঞ্চ, ফেরী বা কোন পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে সেদিকে বাড়তি নজরদারী থাকবে।
তিনি ঘাট এলাকার সড়ক ঠিক রাখতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং লঞ্চ ঘাট এলাকায় সওজ’র নির্মিত ড্রেন যাতে সার্বক্ষণিক পরিষ্কার থাকে সে জন্য সভায় উপস্থিত দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এছাড়াও তিনি ঘাট সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তাগণকে সার্বক্ষণিকভাবে এলাকায় অবস্থানের নির্দেশ প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসক নতুন ফেরী ঘাট নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখেন ও খোঁজ-খবর নেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঈদযাত্রার সার্বিক অবস্থা দেখতে এসে লঞ্চ ও ফেরী ঘাট ঘুরে দেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী সাংবাদিকদের জানান, আমাদের যে প্রস্তুতি রয়েছে সেটা কার্যকর রাখতে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করছি।
তিনি আরো জানান, আগামী ৫দিনে পদ্মায় ৫ফিট পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তিনি জানান আবহাওয়া ভাল থাকলে সর্বকালের সেরা ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারবো। এ সময় জেলা প্রশাসকের সাথে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানোয়ার হোসেন মোল্লাসহ পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।