॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গতকাল ১৯শে আগস্ট তার ঢাকা সফরকে অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে অভিহিত করেছেন।
দুই দিনের সফরের শেষ ভাগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকের আলোচনায় কোভিড-১৯ টিকা ইস্যুটি প্রাধান্য পায়।
নগরীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তার প্রতিপক্ষের সাথে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে সংবাদ কর্মীদের তিনি বলেন, ‘আমি একটি খুব সন্তোষজনক, খুব সংক্ষিপ্ত সফর সম্পন্ন করলাম।’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এর টিকা উদ্ভাবনের দৌড়ে শীর্ষস্থানীয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে টিকা তৈরির পর নয়াদিল্লি তাদের সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে।
শ্রিংলা বলেন, ‘কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করা হলে বন্ধু, অংশীদার ও প্রতিবেশীরা কোনও কথা ছাড়াই এটি পাবে। বাংলাদেশ আমাদের জন্য সবসময়ই একটি অগ্রাধিকার।’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের ৬০ শতাংশ উৎপাদনকারী ভারত এখন ভ্যাকসিনটি ব্যাপক আকারে উৎপাদন করার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শ্রিংলা বলেছেন, গতকাল তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।
শ্রিংলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এমনকি মহামারী পরিস্থিতিতেও তাকে ঢাকা পাঠিয়েছেন।
শ্রিংলা বলেন, ‘আমি এখানে আসার কারণ হল আমাদের প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করেছেন যে, কোভিড পরিস্থিতির কারনে আমাদের মধ্যে খুব বেশি যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু সম্পর্ক (ভারত-বাংলাদেশ) অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে অবশ্যই শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমি মূলত সে বিষয়টি দেখার জন্যই এসেছি।’
পরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “শ্রিংলা তাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী এপর্যন্ত কোন বিদেশী গন্যমান্য ব্যক্তিত্বকে সাক্ষাত দেননি।”
এদিকে মিডিয়া ব্রিফিং এ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ভারত আশ্বস্ত করেছে যে, সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম অগ্রাধিকার পাবে এবং তার প্রতিপক্ষ জানিয়েছেন যে, ভারত কেবল তাদের জন্য এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে না, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়েই এটি পাবে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিষয়ে ভারতকে প্রয়োজনীয় যে কোনো সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতীয় পক্ষ এটি ‘ইতিবাচকভাবে’ নিয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোকে সম্পৃক্ত করতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে।
তিনি বলেন, মহামারী ও মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুরুদ্ধারের বিষয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সহযোগিতা নিয়েও তারা আলোচনা করেছেন।
দুই পররাষ্ট্র সচিব ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এবং যৌথ পরামর্শমূলক কমিশনের (জেসিসি) একটি সম্ভাব্য ভার্চুয়াল বৈঠক সম্পর্কেও আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে দু’পক্ষই জেসিসির বৈঠকটি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে করতে চায় উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সম্ভবত এজেন্ডা ঠিক করার জন্য জেসিসির বৈঠকের আগে আমি নয়াদিল্লী সফর করব।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চিকিৎসা প্রত্যাশী ও ব্যবসায়ীদের ভ্রমণের সুযোগ দিতে উভয় পক্ষই মহামারী পরিস্থিতিতে বিমান ভ্রমণ ‘বাবল’ চালু করতে সম্মত হয়েছে।
এয়ার বাবল মেকানিজমের আওতায় কেবল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করা হবে। তৃতীয় কোনো দেশ এতে যুক্ত হবে না। অর্থাৎ এয়ারলাইনস কোনো ট্রানজিট যাত্রী নেবে না।
বাংলাদেশে অবস্থানরত একজন ভারতীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, ভারত ইতোমধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালদ্বীপের সাথে এ জাতীয় এয়ার বাবল চালু করেছে।
দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সঙ্কটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন এবং ভারত নিরাপদ, সুরক্ষিত ও টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে তার অবস্থান পুনর্বার ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা দাস গাঙ্গুলি একটি মিডিয়া গ্রুপকে বলেছেন, ‘এ সফর উভয় পক্ষের (ভারত-বাংলাদেশ) সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।’
এর আগে, বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্ব পালনকারী শ্রিংলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত মার্চ মাসে ঢাকা সফর করেন। করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পরে এটি শ্রিংলার প্রথম বিদেশ সফর।