Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

মেজর সিনহা হত্যা মামলা : ওসি প্রদীপ-এসআই লিয়াকতসহ সাত পুলিশ সদস্য কারাগারে॥৩জন রিমান্ডে

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭জন পুলিশ সদস্যকে গতকাল ৬ই আগস্ট কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিনহা হত্যা মামলার এই ৭জন আসামী গতকাল ৬ই আগস্ট কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিনের আবেদন জানালে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে ৭জন আসামীর বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। রিমান্ড শুনানী শেষে আদালত মামলার প্রধান আসামী কামলাপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস.আই মোঃ লিয়াকত আলী, ২নং আসামী টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি আসামীদের জেল গেটে জিজ্ঞাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়।
সিনহা রাশেদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৯জনকে আসামী করে গত ৫ই আগস্ট কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)কে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে টেকনাফ থানাকে এই মামলা নিয়মিত মামলা হিসাবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। আদালতের এই আদেশ গত বুধবার রাত ১০টার দিকে টেকনাফ থানায় পৌঁছালে মামলাটি এজাহার হিসাবে গণ্য করা হয়।
গতকাল ৬ই আগস্ট সকালে চট্টগ্রামের বাসা থেকে মামলার ২নং আসামী টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে কঠোর প্রহরায় কক্সবাজার নিয়ে আসে র‌্যাব ও পুলিশের দুটি টিম। অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে তিনি ছুটি নিয়ে চট্টগ্রামের বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে ওসি প্রদীপকে কক্সবাজার নিয়ে আসা হয়। প্রদীপকে সরাসরি কক্সবাজারের আদালত প্রাঙ্গনে নিয়ে আসা হয়। অন্য ৬জন আসামী পুলিশ হেফাজতে বিকালেই আদালতে হাজির হন। এই মামলার এক নম্বর আসামী টেকনাফের কামলাপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস.আই মোঃ লিয়াকত আলী। মামলায় অন্য আসামীরা হলেন ঃ এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল এবং কনস্টেবল মোঃ মোস্তফা। তবে এএসআই টুটুল এবং কনস্টেবল মোস্তফাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
আদালতে ৭জন আসামীর জামিন আবেদন জানিয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলেন- টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী মাদক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক বার সরকারী পদকে ভূষিত হয়েছেন। অন্যান্য আসামীরাও তাদের দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করেছেন মাত্র। তাঁরা কোনভাবেই মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত হতে পারে না। আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন- এডভোকেট রাখাল চন্দ্র মিত্র এবং এডভোকেট মোঃ জাকারিয়া।
অন্যদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকার পক্ষ থেকে তারা জামিনের বিরোধীতা করে তাঁরা বলেছেন, মেজর সিনহা হত্যা জামিন অযোগ্য অপরাধ। আসামীদের জামিন দেয়া হলে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত কাজ ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। মামলায় পাবলিক প্রসিকিউটরকে সহযোগিতা করেন কোর্ট পরিদর্শক প্রদীপ দাশ।
উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আদালতের বিচারক হেলাল উদ্দিন আসামীদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এরআগে এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এম মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে গঠিত এই কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ জাকির হোসেন, সেনাবাহিনী কক্সবাজারের রামুস্থ ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির প্রতিনিধি লেঃ কর্নেল সাজ্জাদ এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহজাহান আলী। কমিটি গত মঙ্গলবার থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। এই সময়ে তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শীসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।