॥স্টাফ রিপোর্টার॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মুত্যুদন্ড প্রাপ্ত খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, আজ রাত ১২টা ১মিনিটে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মাজেদকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। রাত ১২টা ১৫মিনিটে তার মৃত্যুর ডিক্লারেশন দেয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আরো এক খুনির রায় কার্যকর করতে পেরেছি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান, কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি রাত ১২টা ১মিনিটে কার্যকর করা হয়।
এর আগে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
আইজি প্রিজন বলেন, কারা বিধি অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড কার্যকরে যে সকল কর্মকর্তাগণ থাকেন তারা সকলে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে তিনিসহ, আরো ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট(ঢাকার ডিসি), জেলার পুলিশ সুপার, জেলার সিভিল সার্জন, জেল সুপার ও জেলার।
এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ছয় খুনির ফাঁসি কার্যকর হলো। এর আগে ২০১০ সালের ২৭শে জানুয়ারী খুনি বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার ৪৫ বছর, নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের মামলার ২৫ বছর এবং উচ্চ আদালতের রায়ে ৫জন আসামীর ফাঁসি কার্যকরের ১১ বছর পর গত ৬ই এপ্রিল দিবাগত রাতে গ্রেফতার হয় খুনি মাজেদ। প্রায় ২৩ বছর মাজেদ ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে স্বীকার করেন।
এখনও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। তাঁরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এই ৫জন খুনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় আছেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে স্থানান্তরের পর ২০১৬ সালের ১০ই এপ্রিল উদ্বোধন হওয়া কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় এ কারাগারে এটাই হলো কোনো আসামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রথম ঘটনা।
কারা-কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই মৃত্যুদন্ড কার্যকরে আনুষ্ঠানিকতাগুলো এগিয়ে নিতে থাকে। কারাগারের ফাঁসির মঞ্চও প্রস্তুত করা হয়।
রাতে একে একে আইজি প্রিজন, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন, ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার, ঢাকার সিভিল সার্জন, কারাগারের দুজন সহকারী সার্জন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি কারাগারে প্রবেশ করেন। মৃতদেহ রাখার জন্য আগেই কফিন এনে রাখা হয়।
কেন্দ্রীয় কারা কর্মকর্তারা জানান, মাজেদের দন্ড কার্যকরে প্রধান জল্লাদ ছিলেন শাহজাহান, তার সহকারী ছিলেন জল্লাদ মনির, সিরাজসহ ১০ জনের টিম। রাত ১১টার দিকে কারা মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি ফারদুল্লাহ মাজেদকে তওবা পড়ান।
মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগে মাজেদের সঙ্গে তার স্ত্রীসহ কয়েক স্বজন সন্ধ্যায় শেষ দেখা করেন। কারা কর্তৃপক্ষ পরিবারকে শেষ সাক্ষাৎ করার জন্য আসতে বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বহিস্কৃত) আব্দুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
গত বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার এ আবেদন করেন মাজেদ। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছায়। গত মঙ্গলবার আদালত কর্তৃক মৃত্যুর পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছানোর পর তা মাজেদকে পড়ে শুনানো হয়। এর পর পরই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন মাজেদ।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান মাজেদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয় এই মাজেদ। তখন মাজেদ ছিল সেনাবাহিনীর একজন জুনিয়র অফিসার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে পলাতক অন্যতম আসামি মাজেদকে গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের(ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা।
পরদিন তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। গত বুধবার এ মামলার বিচারিক আদালতে তাকে আনা হয়। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আদেশ দেন আদালত।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম বর্বরোচিত ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
এদিকে গতকাল শনিবার রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে ছিলেন কারারক্ষীরাও।