॥স্টাফ রিপোর্টার॥ করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে এবং ভাইরাস সংক্রমণের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক ব্যবস্থা বিবেচনায় সরকারী সিদ্ধান্তের আলোকে গত ২৩শে মার্চ রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিলসাদ বেগম ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারী করলেও জেলার বর্তমানে এ আদেশ লংঘিত হচ্ছে সর্বত্র।
উক্ত আদেশে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এবং দন্ডবিধি, ১৮৬০ মোতাবেক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কারাদন্ড/জরিমানা আরোপের কথা উল্লেখ করা হলেও কার্যত প্রয়োগ হচ্ছে না।
আদেশ জারীর পর গত ২৬শে মার্চ পর্যন্ত জেলা শহরসহ বিভিন্নস্থানে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ও বলপ্রয়োগ করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার শহরের প্রধান বাজারসহ জেলার সর্বত্র বিভিন্ন দোকান-পাট খোলা থাকলেও মাঠে প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে।
ফলে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এক মিটার দূরত্ব রেখে চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা খুব কম মানুষই মানছেন।
সরকারী অফিসের বিভিন্ন সভায় জনসমাগম, ত্রাণ বিতরণে গণজমায়েত, সাবান, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিফলেট বিতরণে আয়োজকদের ভিড়, জটলা পাকিয়ে কাঁচাবাজার, সড়ক ও মহাসড়কে ট্রাক, মাহেন্দ্র, অটোবাইকে যাত্রী পরিবহন ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে জনসাধারণের অবাধ বিচরণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা বন্ধ না করা গেলে এর পরিনতি ভয়াবহ খারাপ হবে। বাজারগুলোতে মাইকিং করে ভিড় এড়াতে বলা হলেও সে নির্দেশনা কাউকে মানতে দেখা যায়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি এবং ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী প্রশাসন আরো কঠোর হবে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, পিপিএম-বার বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিদেশ প্রত্যাগতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা, জেলার বিভিন্ন স্থানে হ্যান্ডওয়াশ কর্ণার স্থাপন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ ও জনসাধারণকে ঘরে থাকার জন্য মাইকিং করাসহ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। তবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা না থাকায় পুলিশ জনসাধারণের উপর চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে সরকারী সিদ্ধান্তে গত ২৪শে মার্চ দেশের সকল জেলায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজবাড়ী জেলায় যশোর সেনানিবাসের ১০ ইষ্ট বেঙ্গলের সেনা সদস্যদের নিয়োগ করা হলেও জেলা সদরে সেনা বাহিনীর কোন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়নি। ফরিদপুরের আর্মি ল্যান্ডে অবস্থান করে ১০ ইষ্ট বেঙ্গলের সেনা সদস্যরা রাজবাড়ী জেলায় এসে টহল দায়িত্ব করলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে জনসাধারণের মধ্যে কোন প্রভাব পড়েনি।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের বর্তমানে বাংলাদেশে সংক্রমণ এবং বিস্তৃতির ঝুঁকি বিবেচনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজবাড়ী জেলায় সামাজিক দূরত্ব এবং ঘরে থাকা নিশ্চিতকরণে স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি ও সরকারী নির্দেশনা মেনে চললে করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
উল্লেখ্য, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনাসমূহ ঃ (১) ২৬শে মার্চ থেকে ০৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সরকারী, সাপ্তাহিক ও সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি কার্যকর থাকবে। কাঁচাবাজার, খাবার, ফার্মেসী, হাসপাতাল ও জরুরী সেবা এর আওতামুক্ত থাকবে। (২) ছুটির সময়ে সরকারী সিদ্ধান্তের আলোকে সরকারী অফিসসমূহ যথাসম্ভব না খুলে অনলাইন কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। (৩) জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ীর বাইরে যাওয়া যাবে না। (৪) জেলায় কোন নিয়মিত সাপ্তাহিক হাট বসবে না; তার পরিবর্তে হাটের স্থানে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর দোকান খোলা থাকবে। (৫) গণপরিবহন যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। সীমিত চলাচলের ক্ষেত্রে যাত্রী, ড্রাইভার ও সহকারীকে করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। (৬) পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সবরকম সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। (৭) দেশের বাইরে থেকে আগত সকল ব্যক্তিকে, তার পরিবারের সদস্যগণকে এবং সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ও পরিবারকে নিজ গৃহে আবশ্যিকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। (৮) সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার ইত্যাদি বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের আবশ্যিকভাবে তাদের নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করতে হবে। (৯) ব্যাংকসমূহ সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। (১০) জেলায় মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। (১১) সকল হোটেল/খাবারের দোকানে বসে খাওয়া বন্ধ থাকবে, তবে খাবার পার্সেলে করে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে। (১২) চায়ের দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।