Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আজ মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের কার্যক্রমে আজ ২৪শে মার্চ থেকে সশস্ত্র বাহিনী মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।
গতকাল ২৩শে মার্চ বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সচিবালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
করোনা ভাইরাস বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করায়, সরকার মারাত্মক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসাবে আগামী ২৬শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, হাসপাতাল, ফার্মেসী এবং অন্যান্য জরুরী পরিসেবাগুলো ছুটির আওতার বাইরে থাকায় এগুলো খোলা থাকবে।
সরকার ২৯শে মার্চ থেকে ২রা এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সরকারী ছুটি এবং ২৭ এবং ২৮শে মার্চ এবং ৩ এবং ৪ঠা এপ্রিল সরকারী ছুটি এরসঙ্গে যুক্ত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো বলেন, ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে তাঁরা বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর ১০টি নির্দেশনার একটি সেট প্রস্তুত করেছেন।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজেই জনগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে তাঁরা যেন জরুরী প্রয়োজন যেমন- খাদ্য সামগ্রি ক্রয়, ওষুধ কেনা, চিকিৎসাসেবা গ্রহণ এবং মৃতদেহ সৎকার ব্যতীত বাড়ির বাইরে বের না হন।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি কোন দপ্তরের কোন জরুরী কাজের প্রয়োজন হয় তবে তা অনলাইনের মাধ্যমে(ছুটির দিনগুলোতে) করতে পারে। যারা তাদের অফিস খোলা রাখাটা প্রয়োজনীয় মনে করবেন তারা কেবলমাত্র সরকারী অফিসের সময়ে এটা করতে পারবেন। তবে, জনগণের প্রয়োজনীয়তা মেনে সীমিত আকারে ব্যাংকগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক(বিবি) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, সরকার ঘোষিত ছুটির সময়ে তৈরী পোষাক কারখানাগুলো খোলা থাকবে কারণ তারা এখন কর্মী সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে।
তবে, আরএমজি মালিকেরা তাঁদের কারখানায় ইতোমধ্যেই সতর্কতা অবলম্বন করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম থেকে ১০ হাজার পিপিই পেয়েছি এবং আগামীতে আরো ৯০ হাজার পাবো।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে সমন্বয় করে সেনা সদস্যরা কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সন্দেহভাজনদের কোয়ারেন্টিনে পাঠাবেন।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জনসাধারণকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি-ঘরের বাইরে না যেতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যে কোনো সরকারী অফিস খোলা রাখতে পারে।
আনোয়ারুল বলেন, ছুটির দিনে গণপরিবহন চলাচল সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে জনগণকে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যদি কোনও যাত্রী জরুরী প্রয়োজনে গণপরিবহনে ভ্রমণ করতে চান তবে তাকে অবশ্যই ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হ্যান্ড গ্লাভস এবং মাস্ক পরার পাশাপাশি চালক ও হেল্পারদের অবশ্যই পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জনসাধারণের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে সীমাবদ্ধভাবে ব্যাংকিং পরিষেবা চালু রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
তিনি বলেন, সরকার ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’র আওতায় করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নগরীর নিম্ন-আয়ের লোকেদের সহায়তা দেবে এবং এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সরকার জীবিকার সুযোগ তৈরি করেছে এবং ভাসান চরে প্রায় এক লাখ লোকের আবাসন নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে আনোয়ার বলেন, জেলা প্রশাসনকে সুযোগসুবিধা গ্রহণ করতে আগ্রহীদের এ দ্বীপে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দরিদ্র জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের খাদ্য ও সহায়তা প্রদানের জন্যও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য ৫০০ জন চিকিৎসকের একটি তালিকা প্রস্তুতের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-কে নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকার দেশের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি কোভিড-১৯-এর লক্ষণযুক্ত লোকদের নামাজের জন্য মসজিদে না যাওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর) গতকাল সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এর বাংলাদেশে সংক্রমণ, বিস্তৃতির সম্ভাব্যতা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো ও উপকুলীয় এলাকায় “ওহ অরফ ঃড় ঈরারষ চড়বিৎ”-এর আওতায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। আজ ২৪শে মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দুরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনী তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের(জেলা প্রশাসকদের) সমন্বয়ে সেনাবাহিনী করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেনটাইনের বাধ্যতামূলক সময় পালনে ক্রটি/অবহেলা করছে কিনা তা পর্যালোচনা করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইন অনুসারে সেনা বাহিনীর নিকট অনুরোধ জানাবে।
নৌবাহিনী উপকুলীয় এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কাজ করবে। বিমান বাহিনী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জরুরী পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবে।