॥আশিকুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী বলেছেন, গোয়ালন্দবাসী যেই অপবাদের বোঁঝা মাথায় নিয়ে মনবেদনা বুকে চেপে এতোদিন কাটিয়েছেন সেই মনবেদনার অবসান শেষের দিকে এসে পৌঁছেছে।
গতকাল ২রা মার্চ দুপুরে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আজকে এই যে গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি। এই কমিটিকে আমি মনে করি আপনারা অত্যন্ত সুন্দর একটি কমিটি উপহার দিয়েছেন। যে কমিটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে।
কাজী ইরাদত আলী বলেন, আমার মনে হয় গোয়ালন্দ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কোন অনৈতিক ব্যক্তি স্থান পায়নি। কারণ প্রথম থেকেই আমার নির্দেশ ছিলো যে কোন অনৈতিক ব্যক্তি যেন কমিটিতে স্থান না পায়। যে কয়েকবার সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে এই গোয়ালন্দবাসী নৌকাকে সবচেয়ে বেশী ভোট দিয়েছেন। যেখানে নৌকার পক্ষে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে সেখানে অনৈতিক কর্মকান্ড কেনো হবে। অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহে তারা উভয়ই একই অপরাধে অপরাধী। আমরা যেন কোন অনৈতিক কর্মকান্ড না করি, কোন অনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় না দেই। আমরা এমন নজির স্থাপন করতে চাই যে এই গোয়ালন্দে কোন অবৈধ কর্মকান্ড হবে না। সমস্ত অবৈধ এবং অনৈতিক কর্মকান্ডকে আমরা রুখে দিবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৮ই আগস্ট আমার বাবাকে হত্যা করা হয়। সেসময় আমি ছোট ছিলাম। আমি কখনো দলের সাথে বেইমানী করিনি, দলের বিপক্ষে কখনো অবস্থান নেইনি। আমি বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে তার আদর্শকে বুকে লালন করে কাজ করে চলেছি। একজন মানুষের মধ্যে যদি নৈতিকতা না থাকে, চারিত্রিক গুণাবলি না থাকে তাহলে কিন্তু সে সংগঠনই বলেন বা সমাজই বলেন আর দেশই বলেন কখনো তার ভালো কর্মকান্ড স্থাপন করতে পারেনা।
আগামী ২৯শে মার্চ অনুষ্ঠিতব্য গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনীত করার জন্য উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে আমরা জেলা আওয়ামী লীগ যে সুপারিশ পেয়েছিলাম তাতে ৩জনের নাম ছিলো। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে সুপারিশ করে সেই নামগুলো আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় নেতারা যাচাই বাছাই করে ৩জনের মধ্য থেকে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা মুন্সীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে যার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন আমরা তার পক্ষেই তথা নৌকার পক্ষেই কাজ করবো। নৌকার বিকল্প অন্যকিছু হতে পারেনা। নৌকা আমাদের স্বাধীনতা, নৌকা আমাদের বাঙালি জাতির মুক্তি, নৌকা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক। নৌকার বিপক্ষে যেই দাঁড়াক অবশ্যই তাকে আমরা বর্জন করবো। আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এমন কোন শক্তি নাই যে নৌকার বিজয় ঠেকিয়ে রাখে। আমি গোয়ালন্দবাসীকে এবং গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে আহবান করবো আপনারা আগামী ২৯শে মার্চ নৌকার পক্ষে কাজ করে নৌকার বিজয়কে সুনিশ্চিত করবেন।
গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাকলী নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অরুপ দত্ত হলি, গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ির সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মোস্তফা মুন্সী এবং গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ।
গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সুজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডল, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ রেজা ও কার্যকরী সদস্য গণেশ পাল বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ির সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মোস্তফা মুন্সী বলেন, আপনারা সকলেই চেয়েছেন তাই বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি শুধুমাত্র এই নৌকার কান্ডারী। এই নৌকা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আমি গোয়ালন্দ উপজেলাবাসীর পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বিতর্কিত সেই নুরুল ইসলাম মন্ডল গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। আমরা বিভিন্নসময় দেখেছি পত্র-পত্রিকায় ও টিভিতে নুরু মন্ডলের কুকর্ম নিয়ে নিউজ হয়েছে। তার অনেক অপকর্মের কাহিনী প্রচারিত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছি। সেই বিতর্কিত লোককে নিয়ে আমাদের এমপি মহোদয় কেন এতো মাতামাতি করেন। আজকে নুরু মন্ডলের এতোবড় দুঃসাহস হয় কি করে? সে বলে বেড়ায় যে, এমপি সাহেব তাকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন এমপি, আওয়ামী লীগের একজন নেতা যিনি পাঁচবার এমপি হয়েছেন যিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদধন্য। তিনি কি করে নুরু মন্ডলের মতো একজন লোককে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড় করান। আমাদের ভাবতেই অবাক লাগে। যেই নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি আজ এমপি হয়েছেন সেই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কি করে তিনি অবস্থান নিচ্ছেন।
এ ছাড়াও অন্যান্য বক্তাগণ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বিতর্কিত সেই নুরুল ইসলাম মন্ডল নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সংসদ সদস্যকে দায়ী করে বলেন নৌকার বিপক্ষে যারা অবস্থান নেবে আগামীকে গোয়ালন্দের আওয়ামী লীগ তাদেরকে বর্জন করবে।
পরিচিতি সভায় জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা মুন্সীকে উপস্থিত উপজেলা ও পৌরসভা আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় সকল নেতৃবৃন্দ একে অপরের হাতে হাত ধরে উঁচু করে নৌকার পক্ষে কাজ করার শপথ গ্রহণ করেন।