॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের সময়ে দৌলতদিয়া ঘাটের যানজট পরিস্থিতি নিরসনে সুষ্ঠু ও নিরাপদ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৭ই জুন সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানোয়ার হোসেন মোল্ল¬া, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হাসান হাবিব, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাস, বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ম্যানেজার মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিআইডব্লি¬উটিএ’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খাজা সাদিকুর রহমান, রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ ফজলুল হক, জেলা আনসার ও ভিডিপি’র সহকারী কমান্ড্যান্ট মোঃ জাহিদ হোসেন ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুরাদ হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী খান.এ শামীম, জাতীয় গোয়েন্দা এনএসআই’র সহকারী পরিচালক ওয়ালিউল্ল¬াহ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুরুল হক, র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের ডিএডি মোসলেমসহ বিভিন্ন সরকারী বিভাগের কর্মকর্তাগণ, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপনার সাথে সংশি¬ষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রবেশদ্বার হওয়ায় আসন্ন ঈদে এই অঞ্চলের ঘরে ফেরা মানুষের জন্য খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই ঘাট দিয়ে এই অঞ্চলের প্রায় ১৩টি জেলার মানুষ চলাচল করে। সাধারণ সময়ে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যে পরিমাণ মানুষ পারাপার হয়, আসন্ন ঈদে তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষ পারাপার হবে। এই ঘাটে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা সকলে যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেই কেবল এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এই ঘাট দিয়ে নির্বিঘেœ পার করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ঘাটের কিছু সমস্যা থাকলেও আমি আশা করি আসন্ন ঈদের আগেই পুরাতন ৪টি ঘাটসহ নতুন আরো ২টি ঘাট আমরা চালু করতে সক্ষম হবো। ঘাটে পারাপারের জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে সার্বক্ষণিক ১৮ থেকে ১৯টি ফেরী যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করবে। এছাড়াও এই রুটে সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২২টি লঞ্চ এবং বিকেল ৫টার পরে ৩২টি লঞ্চ যাত্রী পারাপার করবে। কোন লঞ্চে কোন অবস্থাতেই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করতে দেওয়া হবে না। এই নিয়ম কোন লঞ্চ না মানলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঘাটের সার্বিক চিত্র জেলা পুলিশ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করবে। ঘাটে সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট দায়িত্ব পালন করবে। যদি যাত্রীদের সাথে কোন ধরনের হয়রানীমূলক আচরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজী বা যাত্রীদের অসুবিধা হয় এমন কোন অপরাধ কেউ করে তবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। ঘাট সংশ্লি¬ষ্ট কোন সরকারী বিভাগ যদি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার গাফিলতি বা অনিয়ম করে তবে তাদেরকেও কোন ছাড় দেওয়া হবে না। লঞ্চের বা ফেরীতে প্রতি যাত্রীর ভাড়া ২৫ টাকার বেশী নেওয়া যাবে না। যদি এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের আগে ও পরে ৩দিন কাঁচামাল পরিবহনকৃত ট্রাক ছাড়া অন্য কোন ট্রাক ফেরী পারাপার জন্য ঘাটে আসবে না এবং ভিআইপি পারাপারে ক্ষেত্রেও মনিটরিং করা হবে বলে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঘাট সংক্রান্ত বিশেষ সভায় যে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার রেজুলেশন উপস্থিত সকলকে পড়ে শোনান ও সে অনুযায়ী সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আসন্ন ঈদে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যাতে নির্বিঘেœ সাধারণ যাত্রী পারপার করা সম্ভব হয় সেই লক্ষ্যে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান।
এছাড়াও তিনি ঈদে ঘাট সংশ্লি¬ষ্ট সকল সরকারী বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করেন।
এছাড়াও প্রস্তুতি সভায় যাত্রীদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস যাত্রী পরিবহন, হ্যাচারী থেকে ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাসহ টিউবওয়েল ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা, রাস্তায় যানবাহন পার্কিং না করা, সিরিয়াল অনুযায়ী যানবাহন পারাপার ও সিরিয়াল ছাড়া ওভারটেকিং না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।