Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও টাকার অভাবে কলেজ শিক্ষক শহিদুলের চিকিৎসা ব্যাহত

॥হেলাল মাহমুদ॥ আলোচিত গ্রীনলাইন পরিবহনের একটি বাসের দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম সরকারী কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলামের।
গত ১২ই জানুয়ারী যশোরের বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী গ্রীনলাইন পরিবহনের একটি বাস রাজবাড়ী সদর উপজেলাধীন খানখানাপুর বড়ব্রীজ এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি মাহেন্দ্রকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাহেন্দ্রটির ৫জন যাত্রী নিহত এবং শিক্ষক শহিদুল ইসলামসহ ২জন বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন। শহিদুল ইসলামের দুই হাত ও বাম পা ভেঙ্গে চুরমার হওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। তাকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারপর থেকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বিঘিœত হচ্ছে। জরুরী অপারেশন করার প্রয়োজন হলেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তা না করে কালক্ষেপণ করছে। টাকা থাকলে শহিদুল ইসলাম ভালো কোনো হাসপাতালে অপারেশন করাতেন। তার সুচিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি হওয়ায় তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছে না পরিবার। অর্থের অভাবে তিনি উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ এবং স্বামীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হিমসিম খাচ্ছেন তার স্ত্রী।
শহিদুল ইসলামের ছেলে আসিফ মাহমুদ জাইম বলেন, আমি ঢাকা সিটি কলেজে কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং আমার বোন সিদরাতুল মুনতাহা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রতি মাসে আমাদের লেখাপড়ার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়। এ টাকাগুলো আমার বাবা জোগান দিত। কিন্তু আজ প্রায় একমাস হতে চলল বাবা অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন। তার পিছনেও আমাদের অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ঢাকাতে ভর্তি করানোর পরই চিকিৎসক বলেছেন বাবার অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে এতদিন অপারেশন করাতে পারিনি। কারণ অপারেশন করানোর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। অপারেশন করার পরও তার পিছনে আরো অনেক টাকার লাগবে। কিন্তু এখন আমরা কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। কারণ যত দেরীতে বাবার অপারেশন করানো হবে ততই তার শারীরিক ক্ষতি হবে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল বলেন, আহত শহিদুলকে দেখতে আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। যদি দ্রুত অপারেশন না করা হয় তাহলে তার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হবে। কিন্তু অপারেশন ও পরবর্তী চিকিৎসার খরচ খুবই ব্যয়বহুল। শিক্ষকতা করে তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই ছেলে-মেয়েকে ঢাকায় রেখে লেখাপড়া করান। এ অবস্থায় তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার ব্যাপারটি খুবই কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা কলেজের পক্ষ থেকে তাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তার তো আরো অনেক টাকার প্রয়োজন চিকিৎসার জন্য।
আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি মাসুদ পারভেজ জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসটি তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে একটি টাকাও দেয়নি। তারা আমাদের সাথে যোগাযোগও করছে না।