Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়ায় নদীর পাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাটি খননকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান

॥আবুল হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফেলু মোল্লার পাড়ায় পদ্মা নদীর পাড় থেকে ঝুকিপূর্ণভাবে মাটি খননকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতকাল ২৭শে জানুয়ারী দুপুরে গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন থানা পুলিশের সহযোগিতায় এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানকালে ২টি এস্কেভেটর (খনন যন্ত্র) ও ১টি ট্রাক জব্দ করার পাশাপাশি মাটি খননে যুক্ত ৬ জনকে আটক করে ৫০হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। তারা হলো ঃ দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কিয়ামদ্দিন পাড়ার জয়নাল মোল্লার ছেলে ফারুক মোল্লা(৩০), উত্তর দৌলতদিয়ার তারক আলী মন্ডলের ছেলে বেলায়েত মন্ডল(৫০), সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়ার ইমরান হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম(২৩), রাজবাড়ী সদর উপজেলার চরখানখানাপুর গ্রামের আক্কাছ মোল্লার ছেলে লিটন মোল্লা(২৭), মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল আওয়াল(২২) এবং ফরিদপুর সদর উপজেলার আড়োয়াডাঙ্গি গ্রামের ইউছুফ খানের ছেলে জসিম খান(৩১)।
দন্ডপ্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন দাবী করেন, ‘জমির মালিকদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাটি কিনে তা খনন যন্ত্র দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জোর-জবরদস্তি করে কারো মাটি কাটা হয়নি। গত বর্ষায় জমি-জমা ভেঙ্গে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন তারা জমির মাটি বিক্রি করে কিছু নগদ টাকা হাতে পাচ্ছে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সরকারী খাস জমি হোক, আর মালিকানাধীন জমি হোক ইচ্ছামতো মাটি খনন করা আইনতঃ অপরাধ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়।’
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের বর্ষার সময় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন। তখন এই এলাকা নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়ে। এ অবস্থায় এখানে মাটি খনন করা হলে আগামী বর্ষার সময়ে ভাঙ্গণের ঝুঁকি আরও বাড়বে। বাড়ী-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় ফরমান শেখ জানান, ২সপ্তাহ আগে আমার নিজের জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় বেলায়েত, খোকন, ফারুক, ওহাবসহ কয়েকজন খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। আমি বাঁধা দিলে তখন তারা চলে যায়। আবার দুইদিন ধরে আমার জমিতে তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোন বাঁধাই তারা মানতে নারাজ।
স্থানীয় আঃ সালাম মোল্লা, রহমান খানসহ অনেকেই জানান, গত বছর বর্ষায় ভয়াবহ নদী ভাঙন হয়। এ অবস্থায় গ্রামটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে। এই শুষ্ক মৌসুমে এখানে মাটি খনন করা হলে আগামী বছর হয়ত এই গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামের অন্তত ২শ পরিবারকে ঝুকিতে ফেলে অবৈধ ভাবে মাটি খনন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ না হলে আগামী বর্ষায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরকারী খাস জমি ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে একাধিক খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। এর মাত্র কয়েকশ গজ দুরে মূল পদ্মা নদী। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে গেলেও বর্তমানে সেখানে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ। এখান থেকে কাটা মাটি ট্রাকে করে পরিবহনের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তা। এ সময় সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকটি ট্রাক দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। আটক করা হয় দুইটি খনন যন্ত্র ও একটি ট্রাক। গ্রেফতার করা হয় ৬জনকে।