॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ‘পদ্মা কন্যা’ হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলা। এ জেলার ৮৫ কিলোমিটারের উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনে শতশত বিঘা ফসলী জমি ও বসতবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমের দুর্দশা কাটতে না কাটতেই আবার অসময়ের নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা, দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলী জমি। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ভাকলা ইউনিয়নের ছোট ঝলো, বড় ঝলো, রূপপুর, গোড়ামারা, কাওয়ালজানি, চর বরাট, দেবগ্রামের আজিজ সরদারের পাড়া, মঈন উদ্দিন শেখের পাড়া, হোসেন মোল্লার পাড়া, আবেদ শেখের পাড়া ও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার ফসলী জমিতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব জমিতে বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। গত এক মাসের ভাঙনে কয়েকশত বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। জমি ও ফসল হারিয়ে কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়ছেন।
ওই সব এলাকার কৃষকরা বলেন, নদীর পাড়ে সবজি ভালো হয়। এ জন্য অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছিলাম। কিন্তু শুকনোর সময় এমন ভাঙন আগে কখনও দেখিনি। কয়েক সপ্তাহের ভাঙনে অনেক জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। সরকার নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আমরা বেঁচে যেতাম।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুল ইসলাম বলেন, এ বছরের ভাঙনে ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯৪টি পরিবারের তালিকা তৈরী করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের আকস্মিক ভাঙনে অনেক কৃষকের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ বিষয়টিও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্পের কাজ দ্রুত হলে দেবগ্রাম ইউনিয়ন রক্ষা করা সম্ভব।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ গোয়ালন্দ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরীভাবে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। তবে বিআইডব্লিউটিএ একটি ডিপিপি প্রণয়ন করেছে। ওই প্রকল্পটি পাস হলেই ভাঙন এলাকায় কাজ শুরু করা হবে। এতে দৌলতদিয়া ঘাটের ভাটি ও উজানের মোট ৬কিলোমিটার এলাকায় কাজ হবে। বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প অনুমোদনের কাজ করলেও মূল কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডই করবে।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এ বছর বর্ষাকালে জেলার ৫কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন হয়েছিল। এতে ৭৩৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুকনো মৌসুমেও গোয়ালন্দের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ নদী ভাঙন রোধে কাজ করে। বিআইডব্লিউটিএ’র একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর কাজ আগামী বছর শুরু হবে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৭কিলোমিটার ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আশা করছি ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্পটির অনুমোদন হবে। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।