Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

চট্টগ্রামে ৩২বছর পর শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলার রায় ঃ ৫জন পুলিশের মৃত্যুদন্ড

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভার আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়ে ২৪জনকে হত্যার ঘটনায় ৫জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে সকলকে ৫০হাজার টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে।
গতকাল ২০শে জানুয়ারী বেলা ৩টায় চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ইসমাইল হোসেন এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন ঃ পুলিশের তৎকালীন হাবিলদার প্রদীপ বড়ুয়া, কনস্টেবল মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ আব্দুল্লাহ ও ইন্সপেক্টর গোপাল চন্দ্র(জেসি) মন্ডল। জেসি মন্ডল ছাড়া অন্য ৪জন আসামী কারাগারে রয়েছে।
এ মামলার অপর ৪জন আসামীর মধ্যে প্রধান আসামী চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্সপেক্টর গোপাল চন্দ্র(জেসি) মন্ডল ঘটনার পর থেকে নিরুদ্দেশ। তিনি ছিলেন কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। এসব ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে আসামীদের। হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় ৫জন আসামীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
তিনি জানান, ১৯৮৮ সালের ২৪শে জানুয়ারী নগরের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গাড়ি বহর নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিও’র সামনে আসে। তখন আচমকা গর্জে উঠে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে একে একে ২৪জন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আহত হন আরো দু’শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণের সময় মানববেষ্টনী তৈরি করে শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন ঃ মোঃ হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মোঃ কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
পিপি এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ই মার্চ আইনজীবী মোঃ শহীদুল হুদা বাদী হয়ে ওই ঘটনায় মামলা করেন আদালতে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তের ভার পড়ে সিআইডির ওপর। সিআইডি ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। আবারও আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩রা নভেম্বর পুলিশের ৮জন সদস্যকে আসামি করে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চলতি বছরের ১৪ই জানুয়ারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১৯শে জানুয়ারী সাফাই সাক্ষী দেন ৪জন আসামী। ১৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপিসহ ৫৩জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঘটনার আগের রাতে তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ(সিএমপি) কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা’র অফিসে গোপন সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় শেখ হাসিনাসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা করার। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ঘটনার দিন পেট্রোল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৪জন পুলিশ সদস্য ৫রাউন্ড করে গুলি চালান। তৎকালীন সিএমপি’র দায়িত্বশীল ৯জন পুলিশ কর্মকর্তা দায়ী আসামীদের শনাক্ত করেছেন এবং আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদানে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এছাড়া যুক্তিতর্কের সময় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে জে সি মন্ডল তার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছিলাম আমরা। আসামীরা নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এ মামলার বাদী আইনজীবী মোঃ শহীদুল হুদা, প্রধান আসামী তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের এবং মামলার এক আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।