Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দে কম্পিউটারের দোকান থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রের জাল মার্কশীট তৈরী-অতঃপর

॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে অভিভাবকের বকুনি থেকে রক্ষা পেতে কম নম্বর পাওয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রের স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে জাল মার্কশীট তৈরীর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি অভিভাবকের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় ওই ছাত্র বাড়ী থেকে পালিয়ে রাত কাটায় ফেরীতে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চর মৌকুড়ী গ্রামের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী জিয়াউল হকের ছেলে তুর্য হোসেন সোয়াত(১৩) স্থানীয় লোটাস কলেজিয়েট স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলের অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষায় সে ৯টি বিষয়ে ৭৫০ নম্বরের মধ্যে ৩৭৬ নম্বর পায়, যা তার মা শেফালী খাতুনের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তুর্য কম নম্বর পাওয়ায় তার মায়ের বকুনি থেকে রক্ষা পেতে তার এক বন্ধুর পরামর্শে স্থানীয় তিথী কম্পিউটার সেন্টার নামের একটি দোকান থেকে মার্কশীট পাল্টে ৩৭৬ এর স্থলে ৫৭৬ করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। গত ২১শে অক্টোবর সকালে তুর্য তার মাকে জাল মার্কশীটটি দেখালে তিনি জাল নম্বর পত্রের বিষয়টি টের পেয়ে রাগারাগি করেন এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। এ জন্য তুর্য ওই দিন স্কুলে না গিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে চলে যায়। সেখানকার একটি ফেরীতে উঠে নামাজের স্থানে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। ফেরীতেই তার সারা দিন ও রাত কেটে যায়। এর মধ্যে তাকে না পেয়ে অভিভাবকরা আতংকিত হয়ে পড়েন। মাইকিং, ফেসবুকে প্রচারণাসহ গোয়ালন্দ ঘাট থানায় জিডি করা হয়। পরদিন গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী এক মহিলা ঢাকা থেকে বাড়ী ফেরার পথে তুর্যকে ফেরীতে কান্নাকাটি করতে দেখে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে তাকে চিনতে পেরে বাড়ীতে নিয়ে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেন।
তিথি কম্পিউটার সেন্টারের মালিক শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার দোকানের এক কর্মচারী ওই জাল মার্কশীটটি তৈরি করে দিয়েছিল। আমি জানার পর তাকে দোকান থেকে বের করে দিয়েছি।
তুর্যের মা শেফালী খাতুন বলেন, তার ছেলে এতটা ঘাবড়ে গিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে যাবে তা কখনো ভাবেননি।
লোটাস কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, তুর্যের উপর অভিভাবকদের বাড়তি প্রত্যাশা এবং ওই কম্পিউটারের দোকানীর কারসাজির কারণে ওর জীবন বিপন্ন হতে চলেছিল।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, কোমলমতি শিশুদের উপর কখনো কোন বিষয়ে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়। তুর্য বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারতো। জাল মার্কশীট তৈরী করার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।