Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

পদ্মার ভাঙ্গনে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউপির শতাধিক বিঘা কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন

॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নে ফের নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন আতংকে গত ১০ দিনে প্রায় ১০০টি পরিবার তাদের ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে অন্যত্র চলে গেছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বিঘা কৃষি জমি। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো অন্তত ৪শত পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেবগ্রাম ইউনিয়নের দেবগ্রাম, লোকমান মেম্বারের পাড়া ও কাওয়ালজানিসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক হারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবার ভাঙ্গন আতংকে ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে অন্যত্র চলে গেছে। পড়ে থাকা শূন্য বসতভিটা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বসতভিটার পাশে থাকা পারিবারিক কবরস্থান নিমিষেই পদ্মার গর্ভে চলে যাচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ কৃষি জমি।
মায়ের কবর ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পেয়ে কাটাখালী থেকে দেবগ্রামে ছুটে এসেছেন তিন ভাই গোলজার শেখ (৭০), আমজাদ শেখ (৬৫) ও মেছের শেখ (৬০)সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। শেষ বারের মতো তিন ভাই ও ভাতিজা দেলোয়ার হোসেন পানির ভিতরে দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত করলেন।
গোলজার শেখ বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে মা গোলজান বিবি মারা গেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রায় দেড় মাস আগে একবার এসেছিলাম। তখন সব ঠিক ছিল। একদিন আগে খবর পেলাম মার কবরটা ভেঙ্গে যাচ্ছে।
গোলজার শেখের ছাট ভাই আমজাদ শেখ বলেন, প্রায় ১৪ বিঘা জমির উপর আমাদের বসতবাড়ীসহ আবাদী জমি ছিল। এ বছরের ভাঙ্গনে প্রায় সবই বিলীন হয়েছে। এখন মাত্র দুই বিঘা জমি আছে। ভাঙ্গনের কারণে গত বছর এখান থেকে আমরা দুই ভাই কাটাখালী গ্রামে বড় ভাইয়ের বাড়ীর কাছে চলে গেছি। এখানে থাকার সময় কৃষি জমিতে ফসল আবাদ করতাম আর মায়ের কবরটা দেখে রাখতাম। মায়ের কবরের পাশে আমার বড় ছেলেরও কবর ছিল।
একই এলাকার বাসিন্দা রোকন শেখ (৫৫) বলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে এখানে বেশ ভালোই ছিলাম। প্রায় ১০ বিঘা জমিসহ বড় বাড়ী ছিল। কিন্তু পদ্মার ভাঙ্গনে গত বছর কিছু অংশ নদী গর্ভের যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট ছিল এ বছর তাও নদীতে চলে যাচ্ছে। ভাঙ্গন আতংকে কিছুদিন আগে এখান থেকে ঘর-বাড়ী সরিয়ে পাশের ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকায় আগের রাখা ১০ কাঠা জমিতে ঘর তুলেছি। এখন গাছপালা যা ছিল তা কেটে নিয়ে যাচ্ছি।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নবাগত চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় দফায় পদ্মার ভাঙ্গনের কারণে এই ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের প্রায় ১শ’টি পরিবার ঘর-বাড়ী সরিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। শতাধিক বিঘা কৃষি জমিও বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে এসব গ্রামের আরো প্রায় ৪শত পরিবার। ভাঙ্গনের বিষয়টি রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীকে অবগত করেছি।
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জরুরীভাবে ভাঙ্গন ঠেকাতে ইতিমধ্যে তারা কিছু স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।