॥নিউইয়র্ক প্রতিনিধি॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা মোকাবেলায় সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা মোকাবেলায় সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্র স্থানীয় সময় আজ ২৭শে সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ সদর দফতরের ১নং সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘টেকসই সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি : মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক পার্শ্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বহু সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা দ্রুত আরোগ্যে সহায়ক হয়। দ্বিতীয়ত, একই ব্যক্তির মধ্যে দুই বা ততোধিক রোগের উপস্থিতির ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা অন্যান্য রোগের আরোগ্যে সহায়ক হয়। তৃতীয়ত, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হাসপাতাল কর্তৃক পরামর্শকৃত কোন চিকিৎসার ক্ষেত্রে অব্যাহত ফলোআপ সেবা দিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রায়শ মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে বাদ রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘মানসিক রোগ প্রতিরোধে আমাদের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী ও দক্ষ সেবাদান ব্যবস্থার মাধ্যমে ওষুধ ও সুলভ মানসম্মত সেবা পাওয়া দরকার। আমাদের বিশেষ কৌশলও দরকার।’
তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৮ সালে তাঁর সরকারের প্রথম মেয়াদে তারা কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালু করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রধানত গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত ১৪ হাজারের বেশি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। এ ধরনের ক্লিনিক স্থাপনে কমিউনিটি জমি দান করে থাকে এবং সরকার বিনা খরচে ভবন নির্মাণ, দক্ষ কর্মী প্রদান এবং ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রদানে একটি কার্যকর মডেল হিসেবে স্বীকৃত, যাতে প্রতিরোধমূলক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মৌলিক সেবা অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে তাঁর সরকার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩’ এবং ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বহু অংশীদার ভিত্তিক, সামগ্রিক ও সার্বিক কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কৌশল পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করছি।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে তাদের মূলবান অভিজ্ঞতা বিনিময়ে এগিয়ে আসবে এবং কারিগরি ও আর্থিক সম্পদ সনাক্তকরণে সহায়তা করবে।
স্বাস্থ্যকে উন্নয়ন অভিযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অব্যাহত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য এটি অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘সার্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচি সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের আর্থিক দুর্ভোগ ছাড়া মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা’ও মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, এসডিজি’র টার্গেট তিন ও চার স্বাস্থ্য নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতাও মানবাধিকারের ধরনের পাশাপাশি উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে একটি বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্য হিসেবে স্বীকৃত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউএইচও’র প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায়ও একটি অংশীদারিত্বমূলক সমাজের কথা বলা হয়েছে, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মর্যাদা ও সমান অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই দুই ইস্যুই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা রাখছি।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোতে শেরিং, নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রী ওপেন্দ্র জাদব এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও এসইএআরও’র আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালকের উপদেষ্টা এবং অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি ও এনডিডিজ, বাংলাদেশ-এর চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান এবং কর্মসূচি বিভাগের সহযোগী পরিচালক ড. স্টেফান সোয়ার্টলিং পিটারসন, গ্লোবাল পার্টনার্স ইউনাইটেড-এর সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা ইবলিন শেরো, আদেলফি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অব এডুকেশন স্টিফেন শোর, হার্বার্ড মেডিকেল স্কুল-এর গ্লোবাল হেলথের পার্শিং স্কোয়ার প্রফেসর বিক্রম প্যাটেল ও আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন-এর প্রজেক্ট ২০২৫-এর সিনিয়র পরিচালক মাইকেল রোজানফ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।