Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নের চিন্তা করছে জেলা পুলিশ

॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ দেশের সবচেয়ে বড় পতিতাপল্লী রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী।
এখানকার বাসিন্দাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে গ্রামের নাম হিসেবে উল্লেখ করা ছিল ‘দৌলতদিয়া পতিতালয়’। কিছুদিন পূর্বে সেটির পরিবর্তিত নামকরণ করা হয়েছে ‘দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া’। আসন্ন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই পতিতাপল্লীর বাসিন্দারা নতুন পরিচয়ে ভোট দিবেন।
সরকারী তথ্য মতে, ১৩০৮ জন যৌনকর্মী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশী। অতিরিক্ত ঘর ভাড়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের যৌনকর্মীর পেশায় প্রবেশ করানো ও নির্যাতনের বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, পিপিএম (বার)।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার) এ প্রতিবেদককে বলেন, সেখানে কতজন যৌনকর্মী বসবাস করে, জায়গাটা কাদের, যৌনকর্মীদের এত ঘর ভাড়া কেন, তাদের সন্তানরা বড় হয়ে কী করছে- এসব ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার নেয়ার জন্য তিনি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অফিসার ইনচার্জ মির্জা আবুল কালাম আজাদকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে যৌনকর্মীদের নিয়ে যে মুক্তি মহিলা সমিতি কাজ করে তাদের সাথেও কথা বলতে বলেছেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, তারা এদেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ মৌলিক সুবিধা প্রদান করার জন্য সরকার থেকে বলা হয়েছে। দ্রুতই যৌনকর্মীদের একটি ডাটাবেজ তৈরী করা হবে।
দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর যৌনকর্মী মৌ(ছদ্মনাম) বলেন, প্রতারণার শিকার হয়ে এখানে আসতে বাধ্য হয়ে আর বের হতে পারি নাই। আমাদের এখানে বড় বড় মানুষ আসে, কিন্তু কেউ আমাদের ভাগ্যোন্নয়নে নজর দেয় না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা থাকতে বাধ্য হচ্ছি। পতিতাপল্লীতে অবাধ প্রবেশের সুযোগ থাকার কারণে আমাদেরকে নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।
আরেক যৌনকর্মী বলেন, এখানে ৬৪০ জন শিশু রয়েছে। যাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো সরকারকে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
গত দেড় বছরে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর ২০ জন যৌনকর্মী আত্মহত্যা ও খুনের শিকার হয়েছে। এছাড়া পতিতাপল্লী সংলগ্ন বোর্ডিংগুলো থেকেও কয়েকটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। প্রতিটি মৃত্যুই রহস্যে ঘেরা বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যৌনকর্মীদের সাথে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ বহু পুরনো।
এসব বিষয়ও আমলে নিয়েছেন জেলায় সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, পতিতাপল্লীতে মাদক এবং জুয়া খেলা বন্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।