॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে গতকাল ৫ই সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ‘বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতামূলক আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও উদ্বুদ্ধকরণ সঙ্গীতানুষ্ঠান’ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) মোঃ সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আবুল হোসেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নূরে সফুরা ফেরদৌস, রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যালয়ের ছাত্রী কুইন ী হুমায়রা আঞ্জুম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার তাহমিনা আক্তার।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বাল্য বিবাহ একটি ভয়ানক সমস্যা। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান সরকার দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে আরও বেশী সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জেলা তথ্য অফিস আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপকৃত হবে। আজকের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সুন্দর বক্তব্য শুনে আমি বুঝতে পেরেছি তোমরা বাল্য বিবাহ নিয়ে সচেতন আছো। কোন অবস্থাতেই ১৮ বছরের নীচে বিয়ে করা এবং ২০ বছরের আগে মা হওয়া যাবে না। ১৮ বছরের নীচে যদি কোন মেয়ে বিয়ে করে সেটিই হলো বাল্য বিবাহ। অসচেতনতা ও সামাজিক-ধর্মীয়সহ বিভিন্ন কারণে বাল্য বিয়ে হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দারিদ্রতাও বাল্য বিবাহের একটা বড় কারণ। কিন্তু দরিদ্র হিসেবে জন্ম নেয়া অসম্মানের কিছু না-বরং দরিদ্র হিসেবে মৃত্যুবরণ করা অপরাধ। সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাল্য বিবাহ কোন অবস্থাতেই সঠিক কাজ হতে পারে না। তোমরা নিশ্চয়ই আইনের কথা শুনেছো। বাল্য বিয়ে দিলে যেমন মা-বাবা শাস্তি পাবে, তেমনি যে অল্প বয়সে বিয়ে করতে যাবে তারও শাস্তির বিধান রয়েছে। কোনভাবেই তোমরা বাল্য বিয়ে করবে না। যদি কোন বাল্য বিয়ের তথ্য পাও সেটা আমাদেরকে জানাবে। আমরা সেটা প্রতিরোধ করবো। আর এই বাল্য বিবাহের মতো অন্যান্য সামাজিক ব্যধিগুলো প্রতিরোধ করতে পারলেই ভবিষ্যতে আমরা বর্তমান সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
আলোচনা পর্বের শেষে জেলা তথ্য অফিসার তাহমিনা আক্তার বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বাল্য বিয়ে না করার শপথ বাক্য পাঠ করান।
প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণসহ উপস্থিত সকলেও ছাত্রীদের সাথে শপথবাক্য পাঠ করেন। এরপর বিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও উদ্বুদ্ধকরণ সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা তথ্য অফিসের ঘোষক দিলীপ কুমার মন্ডল।
রাজবাড়ীতে বাল্য বিয়ে না করার শপথ নিলো সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪শত ছাত্রী
