Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী পৌরসভার উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা

॥চঞ্চল সরদার॥ রাজবাড়ী পৌরসভার উদ্যোগে গতকাল ২২শে আগস্ট সকালে পৌরসভার রজনীগন্ধা মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গু দুর্যোগে দেশ ঃ প্রতিকার ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, বিশেষ অতিথি হেসেবে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার), সির্ভিল সার্জন মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস ও সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাঃ শামীম আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন পৌরসভার সচিব মোঃ মাসুদ আলম।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, মশা ছোট একটা প্রাণী কিন্তু কাউকে ভয় পায় না। সুযোগ পেলেই কামড় বসায়। পৌরসভার মতো ইউনিয়নগুলোকে কিন্তু তেমন অপরিষ্কার থাকতে দেখি না, কারণ তারা সেগুলো পরিষ্কার করে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা শহরে ঢাকার চেয়ে মশা অনেক কম। ঢাকায় মশার যে উপদ্রব সেটার জন্য দুই সিটি’র মেয়র দায়ী। আমরা যে ওষুধ ছিটালাম সেটা যদি কাজে না আসে তাহলে কোন লাভ নেই। মশক নিধনের ওষুধ কেনার জন্য রাজবাড়ী পৌরসভাকে ১২ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। মশার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেটা চলমান রাখতে হবে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। রাস্তাঘাট-বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাজারের ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। কাজেই এই মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করতে পারবো।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী রাজবাড়ী জেলায় এ পর্যন্ত ২৫৮ জন ডেঙ্গী রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেছি, জনগণের সাথে কথা বলেছি। পৌর মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা ওয়ার্ড ভিত্তিক কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেন। মশার লার্ভা ধ্বংস করার উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অনেক ডেঙ্গু রোগী জানিয়েছে তারা কখনো ঢাকায় যায়নি, কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তার মানে এখানে এডিস মশা রয়েছে, লার্ভা রয়েছে। এটাকে ধ্বংসের জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর যেসকল দেশ ধারাবাহিকভাবে সবসময় সচেতন ছিল তারাই এটাকে দমন করতে পেরেছে। কেউ যদি সচেতন না হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থার আছে। প্রয়োজনে ঢাকার মতো এখানেও আমরা আইন প্রয়োগ করবো। আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করে এই যুদ্ধে জিতবো, রাজবাড়ীকে ডেঙ্গুমুক্ত করবো।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার) বলেন, মশার প্রজনন স্থল বাড়ীর ফুলের টব, ছাদে কার্নিশসহ অন্যান্য জায়গার জমে থাকা পানিতে থাকা মশার লার্ভা বা ডিম হয়তো আমরা ওষুধ দিয়ে মারলাম, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ মশা মারবো কীভাবে। সেগুলো তো আর ওখানে থাকবে না, ঘুরে বেড়াবে-এটাও তো মারতে হবে। মেয়র সাহেবের দায়িত্ব হবে বয়ষ্ক মশাগুলোকেও মারার ব্যবস্থা করা। ডেঙ্গুর থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ৫জনসহ এ পর্যন্ত জেলায় ২৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ৮ জন, পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন এবং বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। সব মিলিয়ে অন্যান্য জেলাগুলোর তুলনায় আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম। সম্মিলিত উদ্যোগের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠে নেমেছে। জনসচেতনার জন্য ১৫ হাজার লিফলেট ছাপানো হয়েছে, সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। পৌরসভার একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। সকলের সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল আমরা এই ডেঙ্গুর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।