॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৮ই আগস্ট সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নূরুল ইসলাম, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বাকাহীদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান, কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন নাহার, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, রাজবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আগস্ট মাস বাঙালী জাতির জন্য শোকের মাস। কারণ ১৯৭৫ সালের এই মাসের ১৫ই আগস্টে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানীদের গভীর ষড়যন্ত্রে এদেশের কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে শাহাদৎবরণ করেন। সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ীতেও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির জনকের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন অনেকে অভিযোগ করেছেন, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সভায় রাজবাড়ীর উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে সেটি কার্যকর হয় না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ জন্য রাজবাড়ী জেলার সকল বিভাগকে আমি আহ্বান জানাবো, যে আলোচনা হবে সেগুলো যেন কার্যকর করা হয় এবং কী অবস্থায় আছে তা পরের মিটিংয়ে জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, বর্তমানে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সরকারী তথ্য মোতাবেক এই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে অবশ্যই সকলকে নিজেদের বাড়ীর আশপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে বার বার জেলাবাসীকে তাদের বাড়ীর ভিতরে ও বাইরে যেসব জায়গায় মশা জন্মায় সেগুলো নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা করে নাই। যা জনস্বার্থে আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। যারা পরিষ্কার করে নাই প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ জন্য সকলকে পরিষ্কার করার জন্য বলা হলো। এতদিন রাজবাড়ী পৌরসভা তাদের ফান্ডের অভাবের কারণে মশার ওষুধ ছিটাতে পারতো না। আমার জানা মতে, সরকার থেকে রাজবাড়ী পৌরসভাকে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ফান্ড দেয়া হয়েছে। আমি আশা করবো রাজবাড়ী পৌরসভা স্বল্প সময়ের মধ্যে শহরে মশার ওষুধ ছিটাবে। রাজবাড়ীর লোকসেড বধ্যভূমিতে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। বিষয়টি জানতে পেরে আমি সরেজমিনে বধ্যভূমিতে গিয়ে বাস্তব অবস্থা দেখে এসেছি। আমি মনে করি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা করা উচিৎ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ঘাটে মহিলাদের ব্যবহারের জন্য কোন ভালো টয়লেটের ব্যবস্থা নাই। যেহেতু রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কিছু ভালো পাবলিক টয়লেট করার প্রকল্প এসেছে, সেখান থেকে অন্তত ১টি যাতে দৌলতদিয়া ঘাটে নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হলো।
জেলা প্রশাসক প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এবং গোয়ালন্দ মোড় নিয়ে যাত্রী ও যানবাহনের মধ্যে অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। যা বিগত সময়ে সড়ক বিভাগের সচিবের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ জন্য রাজবাড়ী ও ফরিদপুর আসা যাত্রীদের এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে গোয়ালন্দ মোড়ের নামকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এবং রাজবাড়ী রাস্তার মোড়কে ফরিদপুর রাস্তার মোড় হিসেবে নামকরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। যেহেতু যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে সেহেতু দুই জেলার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এই নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও সভায় দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির জায়গা, স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা, জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ, এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা, সড়ক বিভাগের রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজের অগ্রগতি, বিদ্যুতের গ্রীড সাব স্টেশন নির্মাণ কাজের মন্থর গতি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শহর রক্ষা বেড়ী বাঁধ স্থায়ীকরণ কাজের অগ্রগতি ও নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বেড়ী বাঁধের পাশের জায়গা দখল, ওজোপাডিকোর ঠিকাদার কর্তৃক শহরের মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য অবৈধভাবে ১০/১২ হাজার টাকা করে গ্রহণ, বিটিসিলের তার চুরিসহ জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
গোয়ালন্দ মোড় রাজবাড়ী রাস্তার মোড় নামে নতুন নামকরণ হচ্ছে
