॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে গত ২৪শে মার্চ বিকেলে ডক্টর গোলাম রব্বানী মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সচেতনতায় দ্বিতীয় সেমিনার-২০১৭ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে সেমিনারে ফাউন্ডেশনের পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ, অধ্যাপক আবুল হোসেন মল্লিক, ডাঃ এমএম আখিরুজ্জামান, ডাঃ আব্দুল মজিদ খান, মোঃ আব্দুস সোবাহান মাষ্টার ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সনৎ কুমার সাহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে হার্ট ব্লকেজ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে ডক্টর গোলাম রব্বানী স্মরণে সৃজনশীল বিজ্ঞান ও সাহিত্য সাময়িকী প্রথম সংখ্যা প্রথম বার্ষিকী ‘ডক্টর রবিন দর্পন-২০১৭ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রসঙ্গত, পাংশার কাচারীপাড়া গ্রামে ১৯৪৫ সালের ১৫ই মার্চ ডক্টর গোলাম রব্বানীর জন্ম। ১৯৭৭ সালের ২২শে জানুয়ারী ডক্টর গোলাম রব্বানী ব্রাজিলের ম্যানায়াস শহরের আমাজান ল্যাবরেটরীতে যোগদান করেন। ব্রাজিলের শতশত মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছিল বলে ব্রাজিলের ম্যানায়াস শহরে এই গবেষণাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রাজিলের মানুষকে ম্যালেরিয়া রোগের হাত থেকে রক্ষা করার ব্রত ছিল তার। তিনি আমাজান ল্যাবরেটরীর গবেষণা ছাড়াও আমাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটবিদ্যা বিভাগের পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের কো-অর্ডিনেটর এবং মেডিকেল সায়েন্স বিভাগের ম্যালেরিয়া সেকশনের প্রধান ছিলেন। তিনি আমেরিকান মশা নিয়ন্ত্রণ এসোসিয়েশন, আমেরিকান জেনেটিক সোসাইটি এবং ফ্লোরিডা কীটবিদ্যা সোসাইটির সদস্য ছিলেন। বিজ্ঞানী ডক্টর গোলাম রব্বানীর সাথে কাজ করার জন্য ম্যানায়াসে আসেন আমেরিকার টেক্সাসের হাউস ডক্টর জ্যাক হায়েস, গেইন্সডেইলের ডক্টর ডুরল্যান্ড, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের ডক্টর ডেরেক চারলেউড। এছাড়াও দুইজন ব্র্যাজিলিয়ান গ্রাজুয়েট ছাত্র এবং তিনজন টেকনিশিয়ান। গবেষণার সুবিধার্থে তিনি মশা ও ম্যালেরিয়া রোগের উৎপত্তি খুঁজতে থাকেন। ম্যানায়াস থেকে ১৫৩ কিলোমিটার দূরে ক্যারাকারাই হাউওয়ের ধারে মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করেন। ১৯৭৭ সালের ১৯ই জানুয়ারীতে তিনি ও তার দল মশার মূল আবাসস্থল পরিদর্শন করতে যান। অবলীলাক্রমে ঐ স্থান পরিদর্শনকালে সকল সদস্যই অ্যানফিলিজ মশার কামড় খান। ২৪শে জানুয়ারীতে ডক্টর গোলাম রব্বানীর মাথা ব্যাথা, জ্বর ও বমি শুরু হয়। ২৯শে জানুয়ারী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেক চেষ্টার পরও তাঁর অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। অবশেষে ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ডক্টর গোলাম রব্বানীর অকাল মৃত্যু হয়।
তাঁর স্মরণে এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে পাংশা শহরের কলেজপাড়া নারায়নপুর এলাকায় ২০১১ সালে ডক্টর গোলাম রব্বানী মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাৎসরিক ইফতার মাহফিল, অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে(প্রাথমিক থেকে উচ্চ পর্যায়ে) বৃত্তি প্রদান, দরিদ্রদের জন্য বস্ত্র বিতরণ ও স্বাস্থ্য সচেতনায় সেমিনারসহ নানাবিধ কর্মসূচী পালন করা হয়।