Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথা লাগা ও ছেলে ধরার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব— পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান,পিপিএম(বার)

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ গুজব ছড়ানো প্রতিরোধে ‘বিশেষ প্রেস ব্রিফিং’ করেছে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ। আজ ২৪শে জুলাই বিকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই বিশেষ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিং-এ পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান,পিপিএম(বার) বলেন, আমাদের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষেরই সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিছু অপরাধ আছে যেগুলো আইন প্রয়োগ করলেও অপরাধ যাতে সংঘটিত না হয় সে ব্যাপারে আমাদের কিছু সামাজিক দায়িত্ব থাকে। সাম্প্রতিককালে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় শুধুমাত্র ছেলে ধরা সন্দেহে রেনু নামের একজন নিরীহ গৃহবধূকে যেভাবে প্রকাশ্যে গণপিটুনী দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো তা সভ্য সমাজের ন্যূনতম বিবেক সম্পন্ন কোন মানুষ করতে পারে না। তার ভাইয়ের স্ট্যাটাসটি পড়লেই বোঝা যায় ঘটনাটি ছিল কতটা নিষ্ঠুর ও নির্মম। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘তার বোনের সাথে ২মাস আগে তার স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর ২টি বাচ্চা নিয়ে সে বাড্ডার বাসায় থাকতো। সে তার সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে ওই স্কুলে একটি শিশুর সাথে কথা বলার সময় সন্দেহবশতঃ নির্মমভাবে গণপিটুনী দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়।’ আমাদের নৈতিকতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অথচ আমাদের আইনে আছে কোন নারী মারাত্মক কোন অপরাধ করলেও যদি তার দুধ খাওয়া সন্তান থাকে তাহলে বিচারকের ওই নারীকে জামিন দেয়ার এখতিয়ার আছে। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গুজব রটেছে পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথা লাগছে। গুজব রটানো ১জনকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে সে ওই এলাকার এক বিএনপি নেতার প্ররোচণায় ওই কাজ করেছে। সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার ২জন স্কুল শিক্ষার্থী তিন কিলোমিটার দূরে তাদের বন্ধুর বাড়ীতে ঘুরতে গেলে এলাকায় ডালপালার মতো গুজব রটে যায় ‘তাদেরকে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মাথা কেটে নেয়া হয়েছে’। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ তদন্ত করে দেখে শিশু দুইটি তাদের বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে গেছে। এই গুজব রটানোর মাধ্যমে মানুষকে আতংকিত করার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না, খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের যার যার অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই কোন ধরনের গুজবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। অপরাধী যত বড় অপরাধই করুক তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ও বিচার লাভের সুযোগ দিতে হবে। সে জন্য তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে। একইভাবে সন্দেহভাজনদেরও পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে সেও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কোন গুজব ছড়ালে বা অন্যের ছড়ানো গুজবে লাইক দিলে বা শেয়ার করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। যে কোন অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে ‘৯৯৯’ নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট থানায় বা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে খবর দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে পুলিশ পৌঁছে যাবে। যেহেতু রাজবাড়ী জেলা একটি শান্তিপ্রিয় জেলা সেহেতু রাজবাড়ীবাসীকে কোন রকম গুজবে কান না দিয়ে গুজব সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিং-এ অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) মোঃ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) মোঃ ফজলুল করিম, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার মজুমদার, ডিবির অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম এবং ডিআইও-১ মীর্জা আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও প্রেস ব্রিফিং-এ ‘গুজব ছড়াবেন না, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না’ শীর্ষক বিশেষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির কপি উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণ করে প্রচারের অনুরোধ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ছেলেধরার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে একটি গুজব। এ ধরনের গুজবে কান দিবেন না। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনী দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। যেকোন পরিস্থিতিতে কাউকে গণপিটুনী দেয়া বা এ সংক্রান্তে উস্কানী দেয়া/সহযোগিতা করা একটি দন্ডনীয় ফৌজদারী অপরাধ। ‘পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা বা রক্ত লাগবে’-এমন অপপ্রচার নিতান্তই গুজব। এ ধরনের গুজবে কেউ কান দিবেন না এবং গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। প্রকৃতপক্ষে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা অন্য কোন মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেশের অস্থিতিশীলতা তৈরী করা রাষ্ট্র বিরোধী কাজের সামিল এবং দন্ডনীয় ফৌজদারী অপরাধ। তাই এই ধরণের কাজ হতে বিরত থাকার জন্য সকল শ্রেণীর মানুষকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। গুজব বা গণপিটুনীর মতো রাষ্ট্র বিরোধী কাজকে প্রতিহত করুন। প্রয়োজনে স্থানীয় থানার সহযোগিতা নিন। কাউকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করুন। প্রয়োজনে টোল ফ্রি ‘৯৯৯’ নম্বরে কল করে জরুরী সাহায্য নিন। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের সাথে ০১৭১৩৩৭৩৫৯৪ নম্বরে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) এর সাথে ০১৭১৩৩৭৩৫৯ নম্বরে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) এর সাথে ০১৭৬৯৬৯২৬৯৯ নম্বরে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) এর সাথে ০১৭১৩৩৭৩৫৯৬ নম্বরে, সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) এর সাথে ০১৭৬৯৬৯২৩৯৮ নম্বরে, রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে ০১৭১৩৩৭৩৫৯৮ নম্বরে, বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে ০১৭১৩৩৭৩৫৯৯ নম্বরে, পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে ০১৭১৩৩৭৩৬০০ নম্বরে, গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে ০১৭১৩৩৭৩৬০১ নম্বরে, কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে ০১৭৬৯৬৯০০৫০ নম্বরে যোগাযোগ করুন।’