॥ইউসুফ মিয়া॥ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড দোজখে পরিণত হয়েছে। এই তীব্র গরমের সময়ে ওয়ার্ডে লাগানো এসি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। নেই কোন বৈদ্যুতিক ফ্যান। আবার ওয়ার্ডেও নেই কোন জানালা।
ফলে পরিস্থিতির যে ভয়াবহতা তাও বর্নণার যোগ্য নয়। আবার ওয়ার্ডের যে লাইটের ব্যবস্থা তাও অপর্যাপ্ত। এর পাশাপাশি বাথরুমও অতি নোংরা, ব্যবহারের অনুপযোগী। ট্যাপ ভাঙ্গা, পানি আসে ধীরে ধীরে। গোসল দূরে থাক, টয়লেট করাই সেখানে খুব কষ্টকর ব্যাপার। বেডে বালিশ নেই, বেডশীটও অত্যন্ত নোংরা। এক রোগী চলে যাওয়ার পর বেডশীট উল্টে দিয়ে আরেক রোগীকে দেয়া হয়। সুইপাররা বাথরুম ও রুম ঠিকমতো পরিষ্কার করে না। তাদেরকে কিছু বলতে গেলে তারা মারমুখী হয়ে জবাব দেয়, ‘যান তত্বাবধায়কের কাছে যান, সিভিল সার্জনের কাছে যান।’ বিপদগ্রস্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা নিরূপায় হয়ে মুখ বুজে এসব সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে। সবসময় সবাইকে নাকে কাপড় দিয়ে থাকতে হয়। ওয়ার্ডে টিকতে না পেরে তাদের অধিকাংশকেই বাইরের গাছতলায় সময় পার করতে হয়। পুরো হাসপাতালের মধ্যেই নেই খাওয়ার পানির কোন ব্যবস্থা, যা ডায়রিয়া রোগীদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। রোগীদের হাসপাতালের বাইরের একটি টিউবওয়েল থেকে পানি এনে খেতে হয়। রোগীরা ভর্তি হওয়ার সময় টর্চলাইট, হাতপাখা নিয়ে আসে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা ফ্যান নিয়ে আসে। এভাবেই সবকিছু মেনে নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয়। ফলে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।
বেলগাছী থেকে আসা রোগীর স্বজন হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমার বৃদ্ধা মাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি। এখানে এসে দেখি নারকীয় অবস্থা। মাকে সুস্থ করা দূরে থাক, আমি নিজেই তো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বাধ্য হয়ে খাঁচা ফ্যান কিনে এনে মায়ের মাথার কাছে লাগিয়েছি। এভাবে তো চলতে পারে না। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতদের মানবিক হওয়া উচিত।’
তবে ওয়ার্ডের যে ২টি কক্ষ নার্সরা ব্যবহার করে সেগুলো অত্যন্ত চকচকে। সেখানে ফ্যান, লাইট, বাথরুম সব ঠিকঠাক। তারা ঠিকই আরাম-আয়েশে থাকে। ডাক্তাররা ডায়রিয়ার রোগীদের দেখতে এসে ওয়ার্ডে টিকতে না পেরে নার্সদের কক্ষে বসেই ফাইলপত্র দেখে চলে যায়।
২০০৯ সালের ১৯শে আগস্ট রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী ডায়রিয়া ওয়ার্ড নামে পরিচিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই আইসোলেশন ইউনিটটির উদ্বোধন করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বদৌলতে যা কিছুদিনের মধ্যেই বর্তমান অবস্থায় পরিণত হয়!
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ঠিক উপরেই(উপর তলায়) হাসপাতালের তত্বাবধায়কের কক্ষ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সবকিছু ঝকঝকে-চকচকে, একেবারে পরিপাটি করে সাজানো। এসি, ফ্যান, লাইট, মনোরম ডেকোরেশন, অত্যাধুনিক কমোড টয়লেট কী নেই সেখানে! আবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনেই জরুরী বিভাগ। সেখানকার যে কক্ষে ডাক্তার বসে সেটিও এসি লাগানো। এর পাশাপাশি রয়েছে সিলিং ফ্যান ও স্ট্যান্ড ফ্যান। একইভাবে হাসপাতালের অন্যান্য যেসব কক্ষ ডাক্তার-নার্সরা ব্যবহার করেন সেগুলোতেও একই রকমের চাকচিক্য, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এসব দেখে ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। তাদের প্রশ্ন কর্মকর্তা, ডাক্তার-নার্সরা এভাবে আরাম-আয়েশে থাকতে পারলে রোগীদের কেন এত দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তারা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।