॥মকবুল হোসেন খান॥ দেশের সামগ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর মাঠ প্রশাসনের কর্ণধার হচ্ছে জেলা প্রশাসন।
কার্যতঃ মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিভূ হিসেবে সুদীর্ঘ আড়াই শত বছরের অধিককাল থেকেই যে প্রতিষ্ঠানটি জনমানুষের আশ্রয়স্থল, সেবার উৎস, সমাজে শান্তি-শৃংখলা সমুন্নত রাখা ও ন্যায্য আচরণের প্রতীক এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা ও নবতর রুচি নির্মাণের শ্রেষ্ঠতম আধার হিসেবে কাজ করে চলেছে তার নাম কালেক্টরেট তথা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। মূলতঃ জেলা প্রশাসন জেলার সার্বিক কর্মকান্ড সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে।
এ ছাড়াও ভূমি ব্যবস্থাপনা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসী, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বহুমাত্রিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা, অধিকার ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষাসহ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রতিষ্ঠানটি অনবদ্য ঐতিহ্য লালন করে আসছে। আর সে কারণেই জেলা প্রশাসনের অধিকর্তা জেলা প্রশাসককে বলা হয় ‘ঞযব উবঢ়ঁঃু ঈড়সসরংংরড়হবৎ রং ঃযব বুব, বধৎ ্ যধহফ ড়ভ ঃযব এড়াবৎহসবহঃ রহ ঃযব ফরংঃৎরপঃ.’
বলাই বাহুল্য, ঐতিহ্যগতভাবেই জেলা প্রশাসন সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় ও তদারকিকরণ এবং অগ্রগতি সম্পর্কে সরকারের উর্ধ্বতন মহলে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রেরণ করে থাকে। সেই দিক থেকে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শওকত আলী গত ১১/০৫/২০১৭ তারিখে যোগদানের পর হতে রাজবাড়ী জেলায় সরকারের অব্যাহত উন্নয়ন কৌশল ও নীতিসমূহ বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছেন।
তিনি সাফল্যের সাথে রাজবাড়ীতে ২বছর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তির বিস্তার ঘটানো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী অফিসে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সমগ্র জেলার ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারী স্বার্থ সংরক্ষণ, সরকারী জমি হতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আদায়, মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্স পরিচালনা, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা, স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত কার্যক্রম মনিটরিং এবং জেলায় সুষ্ঠু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার প্রয়াসে বিগত ২বছর রাজবাড়ীতে সততা, নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং একাগ্রতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের পুরোধা হিসেবে সকল জেলা প্রশাসকের ঙভভরপরধষ চড়বিৎ এক হলেও চবৎংড়হধষ চড়বিৎ এক নয়। সে বিবেচনায় চবৎংড়হধষ চড়বিৎ এর দিক থেকে অনন্যসাধারণ মেধাসম্পন্ন ও সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক ব্যক্তিত্ব হিসেবে রাজবাড়ীর বর্তমান জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শওকত আলী জেলা প্রশাসনের পুরোধা হিসেবে তার রুটিন ওয়ার্কের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অনবদ্য জনসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে রাজবাড়ীবাসী তথা সমগ্র দেশবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন ।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী গত ১১/০৫/২০১৭ তারিখে রাজবাড়ী জেলায় যোগদানের পর পরই রাজবাড়ী জেলার প্রধান দুটি সমস্যা নদী ভাঙ্গন এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের উন্নয়ন ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর পর একে একে জেলার বিভিন্ন সেক্টরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তিনি চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিগত ২বছরে রাজবাড়ীতে তাঁর কর্মকালীন সময়ে সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত চিত্র নিম্নে দেয়া হলো ঃ-
(১) রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেইজ-২) এর বাস্তবায়ন ও নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ ঃ তিনি রাজবাড়ী জেলায় যোগদানকালীন সময়ে নদী ভাঙ্গনের কারণে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ ও দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট হুমকীর সম্মুখীন ছিল। বিগত ২টি বর্ষা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ এর মাধ্যমে তিনি আপদকালীন জরুরী প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন করে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ এবং দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি সাহসিকতার সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্সকে বাদ দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে বালির বস্তা ফেলার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেন। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেইজ-২) এর আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ৩৪১.৯৮৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের মাধ্যমে ৪.৫০০ কিঃ মিঃ পদ্মা নদীর ডান তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে যা জুন ২০২০ সালে সমাপ্ত হবে।
ইতোপূর্বে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেইজ-১) এর মাধ্যমে যে ২.৫০০ কিঃ মিঃ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, গত বর্ষায় বাঁধের মোট ৯টি স্থানে প্রলয়ংকরী ভাঙ্গনে তার প্রায় ১কিঃ মিঃ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়া ১কিঃ মিঃ এর মেরামত কাজের জন্য ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ডিপিপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপের কারণে আগাম টেন্ডার দেয়া হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই উক্ত মেরামত কাজ সম্পন্ন করাই যার মূল লক্ষ্য। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের ১ম ফেইজে জেলার ৫টি উপজেলায় ৬ টি ছোট নদী/খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। এগুলো বাস্তবায়নের পরে সেচ, নৌ চলাচল সুবিধাসহ জেলার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
(২) বিদ্যুৎ সেক্টরে উন্নয়ন ঃ ২বছর পূর্বেও জেলার ২টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকো লিঃ এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির(পবিস) এর মোট চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যেত, এখন চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী রাজবাড়ীতে যোগদানের পর পরই বিদ্যুৎ সচিবকে রাজবাড়ীতে এনে এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সাথে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে সেপ্টেম্বর/২০১৭ হতে ৫ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সুষম সমন্বয় ও জোরালো প্রচেষ্টায় গত ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জেলার গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী জুন/২০১৯ মাসের মধ্যে বাকী ৩টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার কাজ চলছে। জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর নিরলস প্রচেষ্টায় ও অব্যাহত যোগাযোগের মাধ্যমে বিদ্যুতের সমস্যা স্থায়ীভাবে দুরীকরণে শহরের উপকন্ঠে ১৩২/৩৩ কেভি গ্রীড সাব-স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং এ বছরে শেষ হবে। ইতোমধ্যে ওজোপাডিকোর আওতায় ফরিদপুর হতে রাজবাড়ী পর্যন্ত নতুন ৩৩ কেভি লাইন নির্মাণ শেষে নতুন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। উভয় বিতরণ সংস্থার সাব-স্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অভ্যন্তরীণ লাইন মেরামতের কাজ চলছে।
(৩) যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প ঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে এবং জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে “যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ” কর্মসূচিতে এ জেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭১১টি এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১১১৮ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় আলীপুর ইউনিয়নে আলাদীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২টি ব্যারাকে ১০টি ভূমিহীন পরিবার এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দিলালপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩টি ব্যারাকে ১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। একই অর্থ বছরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গুচ্ছগ্রামে ৫টি গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলায় বেতকা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণাধীন রয়েছে যার কাজ ইতোমধ্যে ৬০% সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হলে সেখানে ৮০টি গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। রাজবাড়ী সদর উপজেলায় প্রস্তাবিত “কোলা গুচ্ছগ্রাম” নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ১৫,৪৫,০০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং ইতোমধ্যে পাংশা উপজেলায় “মল্লিকপাড়া গুচ্ছগ্রাম” ও বালিয়াকান্দি উপজেলায় “সোনাপুর চন্দনা গুচ্ছগ্রাম” নির্মাণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলায় আগামী ২বছরে আরও ৬১৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
(৪) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ঃ ১। রাজবাড়ী জেলা সদরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেøক্স ভবন এবং সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হয়েছে যা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক,এমপি গত ২২শে জানুয়ারী ২০১৯ তারিখ শুভ উদ্বোধন করেন। কালুখালী উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ২। এলজিইডি রাজবাড়ী কর্তৃক জেলার ২২টি দরিদ্র ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাকা ঘর তৈরি করেছে। ৩। গত ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মহান বিজয় দিবসে, গত ২৬শে মার্চ ২০১৮ তারিখে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে, গত ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মহান বিজয় দিবসে এবং গত ২৬শে মার্চ ২০১৯ তারিখে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে যথাযথ মর্যাদায় জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। এতে করে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ খুব সম্মানিত বোধ করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। ৪। জেলা প্রশাসক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে বক্তৃতাকালে শিক্ষার্থী/শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সত্যিকার মানুষরূপে নিজেদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ৫। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের জনসেবাধর্মী উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসুস্থ্যতাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদানের জন্য জেলার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১দিনের বেতন দিয়ে ইতোপূর্বে গঠিত ১০ লক্ষ টাকার এফডিআরের “রাজবাড়ী জেলা মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা সহায়তা তহবিল’’ হতে প্রতি ৩মাস অন্তর অন্তর লভ্যাংশ হতে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ৬। জেলার সকল উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কলেজে মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
(৫) মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনায় সাফল্য ঃ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে গত ০১/১০/২০১৭ হতে ২২/১০/২০১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং গত ০৭/১০/২০১৮ হতে ২৮/১০/২০১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় রাজবাড়ী জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ উপজেলা হতে পাংশা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে মা ইলিশ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়ার সুযোগ পায় এবং ইলিশ মাছের আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রি বন্ধ রাখা সম্ভব হয়। দু‘টি অভিযানের পরিসংখ্যান নিম্নরুপ ঃ
(ক) মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০১৭ ১। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানের সংখ্যা ঃ ১৯১টি। ২। জেলা ম্যাজিস্ট্রেসীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের সংখ্যা ঃ ৯৩ টি, ৩। জেলা প্রশাসন ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেসীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযান ও মোবাইল কোর্ট সফলভাবে পরিচালনার কারণে (ক) আটককৃত ইলিশ ঃ ২.২২৬ মেঃ টন (খ) আটককৃত জাল ঃ ১৬.৪৫ লক্ষ মিটার দৈর্ঘ্য (গ) আটককৃত জালের মূল্য ঃ ৩২৯.১৫ লক্ষ টাকা, ৫। মামলার সংখ্যা ঃ ১৯৫টি, ৬। জরিমানা আদায় ঃ ৪.০৩১ লক্ষ টাকা, ৭। কারাদন্ড ঃ ৪১০ জন। (খ) মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০১৮ , ১। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানের সংখ্যা ঃ ২২৪ টি। ২। জেলা ম্যাজিস্ট্রেসীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের সংখ্যা ঃ ১২৫টি, ৩। জেলা প্রশাসন ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেসীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযান ও মোবাইল কোর্ট সফলভাবে পরিচালনার কারণে (ক) আটককৃত ইলিশ ঃ ৩.২২৬ মেঃ টন (খ) আটককৃত জাল ঃ ২৯.৫২৮ লক্ষ মিটার দৈর্ঘ্য (গ) আটককৃত জালের মূল্য ঃ ৫৯০.০০ লক্ষ টাকা, ৫। মামলার সংখ্যা ঃ ৩০৪ টি, ৬। জরিমানা আদায় ঃ ১.০৮০ লক্ষ টাকা, ৭। কারাদন্ড ঃ ৫১৪ জন।
(৬) সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজে সমন¦য় সাধন ঃ জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ৩৯৫.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্যাকেজে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের বাস্তবায়ন কাজ নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও ঠিকাদারদের সাথে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে ৪টি প্যাকেজে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজ তদারকি অব্যাহত রেখেছেন।
(৭) উন্নয়ন মেলার আয়োজন ঃ সফলভাবে পরিচালিত উন্নয়ন মেলার তথ্যাদি ঃ (ক) উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ ঃ ১১ হতে ১৩ই জানুয়ারী, ২০১৮, (খ) উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ ঃ ৪ হতে ৬ই অক্টোবর ২০১৮।
(৮) ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন ঃ সফলভাবে পরিচালিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার তথ্যাদি ঃ (ক) ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ ঃ ১ হতে ৩রা মার্চ ২০১৮।
(৯) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার আয়োজন ঃ সফলভাবে পরিচালিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার তথ্যাদি ঃ (ক) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ ঃ ২০, ২১ ও ২২শে মে, ২০১৭ (খ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ ঃ ২৯, ৩০ ও ৩১শে মার্চ, ২০১৮ (গ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা অনুষ্ঠানের তারিখ ঃ ২৮, ২৯ ও ৩০শে মার্চ ২০১৯।
(১০) স্বচ্ছতার সাথে জনবল নিয়োগ ঃ জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে জেলার বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১০জন অফিস সহায়ক, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আউটসোর্সিংয়ে গাড়ী চালক ১জন, প্রসেস সার্ভার ১জন, অফিস সহায়ক ৫জন, নিরাপত্তা প্রহরী ১জন, রাজস্ব শাখায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অফিস সহায়ক পদে ১০ জনকে নিয়োগ প্রদান করেছেন।
বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার জন্য ৩জন স্টেনোগ্রাফার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ২জন সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ১৬জন অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ৩জন সার্টিফিকেট সহকারী এবং ১জন লাইব্রেরী সহকারী নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। উল্লেখ্য, বিভাগীয় কমিশনার ঢাকার নেতৃত্বে বিভাগীয় নির্বাচন বোর্ড এ নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ২০১৭ অর্থ বছরে ৬জন সহকারী শিক্ষক, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪৮জন সহকারী শিক্ষক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ৩০জন পরিবার কল্যাণ সহকারী, ১জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শককে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
এ ছাড়া আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পে(একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প) ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২জন নৈশ প্রহরী, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩জন নৈশ প্রহরী এবং ২২জন মাঠকর্মী নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ কমিটির সভাপতি হিসেবে বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন যা প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
(১১) ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন ঃ দক্ষতা ও সততার সাথে তার সময়কালে ভূমি সেবা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে একাধিকবার ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবায় ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রয়োগ শীর্ষক প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়েছে। এছাড়াও জেলার ৫টি উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একাধিকবার ই-মিউটেশনসহ ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অন্যান্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালিত হয়েছে।
(১২) খাস জমি উদ্ধার ঃ বিগত দুই বছরে আনুমানিক ১৪.৩৫৩৯ একর সরকারী জমি অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বর্তমানে একাধিক স্থানে সরকারী জমি উদ্ধারের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
(১৩) পৌর/ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ/মেরামত ঃ বিগত দুই বছরে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৩টি, পাংশা উপজেলায় ৫টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ২টি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১টি এবং কালুখালী উপজেলায় ১টি ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলার ২টি উপজেলা ভূমি অফিস, ১টি পৌর ভূমি অফিস এবং ১৬টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস মেরামত করা হয়েছে।
(১৪) বন্যায় ত্রাণ তৎপরতা ঃ রাজবাড়ী জেলায় বিগত দুই বছরে বন্যা, নদী ভাঙ্গন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৮৯৬.০৭৫ মেট্রিক টন জি.আর চাল, ২৮,৮৩,০০০/- টাকা জি.আর ক্যাশ, ৫৫৯ বান্ডিল ঢেউটিন, গৃহ নির্মাণ বাবদ ১৬,৭৭,০০০/-টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫৩১.৪৬০ মেট্রিক টন জি.আর চাল, ৪,৭১,৫০০/- টাকা জি.আর ক্যাশ, ৪৯৯ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহ নির্মাণ বাবদ ১৪,৯৭,০০০/- টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে বিতরণ করা হয়েছে।
(১৫) শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ ঃ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৪,৬২৫টি কম্বল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৪,৭০৫টি কম্বলসহ মোট ২৯,৩৩০টি কম্বল এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৫,০০০টি কম্বল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দ প্রাপ্ত ৪,৫০০টি কম্বলসহ মোট ১৯,৫০০টি কম্বল অর্থাৎ দুই অর্থ বছরে সর্বমোট বরাদ্দ প্রাপ্ত ৪৮,৮৩০টি কম্বর শীতার্ত ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
(১৬) ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান ঃ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী কর্তৃক নিজ হাতেই এল.এ চেক প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কর্মকালীন দুই বছরে বাগমারা-জৌকুড়া আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প, কালুখালী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প, কালুখালী উপজেলায় ৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, গোয়ালন্দ উপজেলায় সারের বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্প, কালুখালী উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এবং পাংশা হাইওয়ে থানার ব্যারাক ভবন ও ডাম্পিং গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ বাবদ ২১৬ জন ভূমি মালিককে জেলা প্রশাসক নিজ হাতে ১৬ কোট ২২ লক্ষ ৮১ হাজার ৩৬৭ টাকার এল.এ চেক প্রদান করেছেন।
(১৭) মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনা ঃ রাজবাড়ী জেলায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৪টি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৯১টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যেগুলোতে সরকারী অর্থায়নের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কয়েকটিতে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী প্রজেক্টরসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছেন।
(১৮) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মোবাইল কোর্টের আপীল শুনানী ঃ বিগত দুই বছরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শওকত আলী তার আদালতে মোবাইল কোর্টের আপীল মামলার শুনানী গ্রহণ করে ৪৩টি মামলার মধ্যে ৩৬টি নিস্পত্তি করেছেন এবং বর্তমানে ৭টি শুনানীর পর্যায়ে রয়েছে।
(১৯) কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচী ও সার ব্যবস্থাপনা ঃ জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত ৯২.৯৩ লক্ষ টাকা মূল্যের ২২৩.৩৫ মেট্রিক টন সার ও ৬৯.৭০০ মেট্রিক টন বীজ ৭,৪৫৭ জন কৃষককে এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত ৫৯.৩৩ লক্ষ টাকা মূল্যের ১৭৬.২০০ মেট্রিক টন সার ও ১২.৭০০ মেট্রিক টন বীজ ৬,২৪০ জন কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রতি মাসেই সারের বরাদ্দ প্রদান ও সেগুলোর সুষ্ঠু বিতরণ তদারকি করছেন।
(২০) বাজার দর মনিটরিং ঃ বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জেলা প্রশাসক নিজে জেলা সদরসহ বিভিন্ন ঊপজেলার একাধিক বাজার মনিটরিং করেছেন এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজার দর সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন।
(২১) বিভিন্ন দপ্তরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে সমন¦য় সাধন ঃ জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্বাবধানে ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলায় নিম্নবর্ণিত উল্লেখযোগ্য দপ্তরসমূহের ভবন নির্মাণ কাজে তিনি তদারকি করেছেন ঃ ১। রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ কাজ তদারকি। ২। রাজবাড়ী টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ কেদ্র(টিটিসি) নির্মাণ কাজ তদারকি। ৩। রাজবাড়ী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ তদারকি। ৪। রাজবাড়ী প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) নির্মাণ কাজ তদারকি। ৫। রাজবাড়ী ডায়াবেটিক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কাজ তদারকি। ৬। বালিয়াকান্দি উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ কাজের তদারকি। ৭। গোয়ালন্দ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ কাজের তদারকি। ৮। কালুখালী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ কাজের তদারকি। ৯। মহিলা কারারক্ষীদের জন্য রাজবাড়ী জেলা কারাগারে অবস্থিত ৬০০ বর্গফুট কোয়ার্টারের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ তদারকি।
এছাড়া বর্তমানে নিম্নবর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে যার বিবরণ নিম্নরূপ ঃ ১। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ফাউন্ডেশনের ঢালাই কাজ তদারকি। ২। রাজবাড়ী জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস ভবনের ফাউন্ডেশনের ঢালাই কাজ তদারকি। ৩। সার্কিট হাউজের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ তদারকি।
(২২) জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে মাদক বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠান ঃ গত ৩১শে মার্চ, ২০১৯ তারিখ পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম, পিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান, বেসরকারী কারা পরিদর্শক হেদায়েত আলী সোহ্রাব, আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হাসান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মোঃ তোজাম্মেল হক সহযোগে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শওকত আলী কারাভ্যন্তরে সকল কারাবন্দীকে নিয়ে মাদক বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় মিলিত হন এবং সভা শেষে কারাবন্দীদের মাদক থেকে বিরত থাকার শপথ বাক্য পাঠ করান।
এছাড়া তিনি জেলা কারাগার নিয়মিত পরিদর্শন এবং কারাগারের কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারী/বেসরকারী ভিজিটরদের সাথে ভিজিটর বোর্ডের সভায় মতবিনিময় করে কারাবন্দীদের জীবনমান উন্নয়ন, সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা, ধর্মীয় শিক্ষা, কিশোর বন্দীদের টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রদান, কারাগারের মজা পুকুরকে মৎস্য বিভাগের সহায়তায় সংস্কার করে পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে মহিলা কারাবন্দীদের সাথে থাকা শিশুদের খেলাধুলার উপকরণ সরবরাহ, মহিলা কারাবন্দীদের সাথে থাকা শিশুদের জন্য মহিলা ওয়ার্ডের ২য় তলায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, কারাবন্দীদের বিনোদন ও খেলাধুলার উপকরণ সরবরাহ, কারাগারে প্রয়োজনীয় জনবলের ব্যবস্থা করে দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত একটি কারাবন্দী ভবন চালুকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে কারাগারকে একটি আধুনিক মননশীল কারাগারে রুপান্তরের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
(২৩) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আধুনিকায়ন কাজ ঃ গত দুই বছরে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে আধুনিকারন ও জনবান্ধব করতে তিনি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপন, ৩.৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেনারেটর হাউজ নির্মাণ, ৪.৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ সজ্জিতকরণ, ২.৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পুরাতন গ্যারেজ মেরামত, ১.৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন, ৯.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সম্মেলন কক্ষে পিএ সিস্টেম স্থাপন, ৩.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইন্টারকম সিস্টেম স্থাপন, ২.৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লাইব্রেরী শাখার আধুনিকায়ন, ১.৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অফিসে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ মেশিন স্থাপন, ৩.৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নেজারত শাখায় আধুনিক আসবাবপত্র সরবরাহ, ৫.৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন গ্যারেজ নির্মাণ, ৪.৬৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিন এডিসির কক্ষ সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ১.৯৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এনডিসির কক্ষ সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ২.৪০৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ০.৯৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নামাজ ঘরে এসি সংযোজন এবং ২.১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাধারণ শাখা ও জে.এম শাখায় আধুনিক আসবাবপত্র সরবরাহ কাজ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী রাজবাড়ী কালেক্টরেট ক্লাবের আসবাবপত্র ক্রয় ও টেলিভিশনের জন্য ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছেন।
(২৪) রাজবাড়ী সার্কিট হাউজের আধুনিকায়ন কাজ ঃ গত দুই বছরে রাজবাড়ী সার্কিট হাউজে ০.৯২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সার্কিট হাউজের সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য বাউন্ডারী ওয়ালে রঙিন ভাল্ব সংযোজন, ১০.১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সার্কিট হাউজে আধুনিক মানের আসবাবপত্র, টিভি, র্যাক ও পর্দা সরবরাহ, ২.৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সার্কিট হাউজের সম্মুখস্থ পার্কের সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সার্কিট হাউজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
(২৫) ডাঃ আবুল হোসেন ট্রাস্ট পরিচালনা ঃ জেলা প্রশাসকের সরাসরি তত্বাবধানে রাজবাড়ী শহরের উপকন্ঠে ভবদিয়া নামক স্থানে ডাঃ আবুল হোসেন ট্রাস্টের অধীনে মিউজিয়াম, এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত ট্রাস্টের অধীন ৮৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের জমি এবং ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের স্থাপনা রয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েকগুণ বেশী।
(২৬) জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টি.আর প্রকল্পের খাদ্যশস্য দ্বারা জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন ঃ জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টি.আর প্রকল্পের খাদ্যশস্য দ্বারা গত দুই বছরে রাজবাড়ী টেনিস ক্লাব প্র্যাকটিস ওয়াল নির্মাণ, রাজবাড়ী সার্কিট হাউজের সামনে ফুলের বাগান তৈরী, রাজবাড়ী কালেক্টরেট প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, রাজবাড়ী লেডিস ক্লাবের উন্নয়ন, রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাবের উন্নয়ন, গোয়ালন্দ/পাংশা উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার স্থাপন, কেকেএস বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের লক্ষ্যে মাটি ভরাট কাজে সহায়তা, গোয়ালন্দ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সরঞ্জাম ক্রয়, পাংশা/কালুখালী অফিসার্স ক্লাবের উন্নয়ন, কালুখালী উপজেলার মোহাম্মদ আলী একাডেমীতে আসবাবপত্র সরবরাহ, বালিয়াকান্দি উপজেলার সাধুখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সোলার সিস্টেম স্থাপন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিস/গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ/পাংশা উপজেলা পরিষদ/পাংশা বিএডিসি ফার্মের রাস্তা/পাংশা উপজেলার বিষ্ণুপুর গোরস্থানের সামনের রাস্তায় সোলার স্ট্রীট লাইট স্থাপন, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়/কালুখালী উপজেলার নশরতশাহী রামচন্দ্রপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প/বালিয়াকান্দি উপজেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে সোলার প্যানেল স্থাপন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা ভূমি অফিস/ রাজবাড়ী কালেক্টরেট প্রাথমিক বিদ্যালয়/বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজ/কালুখালী অফিসার্স ক্লাবে সোলার প্যানেল স্থাপন, রাজবাড়ী সার্কিট হাউজের সামনে শিশু পার্ক/শহীদ খুশী রেলওয়ে মাঠ/গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্প/দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট/পাংশা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনের রাস্তা/পাংশা উপজেলার পারডেমনামারা আশ্রয়ণ প্রকল্প/কালুখালী উপজেলার সুর্যদিয়া রেলক্রসিং এর পাশে স্ট্রীট সোলার লাইট স্থাপন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার কোলা সদর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণে সহায়তা, রাজবাড়ী কালেক্টরেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, রাজবাড়ী জেলা রোভার স্কাউটস এর জন্য বাদ্যযন্ত্র ক্রয়, রাজবাড়ীর ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, জেলা প্রশাসন পরিচালিত প্রত্যয় প্রতিবন্ধী স্কুলের উন্নয়ন, গোয়ালন্দ উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের উন্নয়ন, পাংশা উপজেলার ইয়াকুব আলী স্মৃতি পাঠাগারের উন্নয়ন, পাংশা উপজেলার চরগোপালপুর আদিবাসী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ মেরামত ও আসবাবপত্র ক্রয়, বালিয়াকান্দি উপজেলার শালমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, কালুখালী উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের খেলাধূলার সামগ্রী ক্রয়, কালুখালী উপজেলার মদাপুর জামে মসজিদের উন্নয়ন, রাজবাড়ী সুইমিং পুল/গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট/তেনাপচা আশ্রয়ণ প্রকল্প/পাংশা উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প/পাংশা উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে/পাংশা উপজেলা পরিষদের সামনে/বালিয়াকান্দি উপজেলা অফিসার্স ক্লাব/বালিয়াকান্দি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সামনে সোলার স্ট্রীট লাইট স্থাপন, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হোম সোলার সিস্টেম স্থাপন, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের উন্নয়ন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুনচী চৌরাস্তা জামে মসজিদের উন্নয়ন, রাজবাড়ী শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চত্বরের মুক্ত মঞ্চের সাথে গ্রীন রুম(সাজ ঘর) নির্মাণ, পাংশা উপজেলার হাবাসপুরে ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের সাইকেল স্ট্যান্ড স্থাপন এবং মাটি ভরাট, কালুখালী উপজেলার রুপসা মেধা চয়ন একাডেমীর উন্নয়ন, বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের টিনসেড ভবন মেরামত, বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজের ল্যাট্রিন মেরামত এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের ভররামদিয়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দির সংস্কার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
(২৭) জেলা ব্র্যান্ডিং বুক প্রকাশনা ঃ এক সময়ের খর¯্রােতা পদ্মা নদী বিধৌত ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জেলা রাজবাড়ী। জেলা প্রশাসনের জনসেবাধর্মী উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনায় জেলা ব্র্যান্ডিং কর্মসূচীর আওতায় পদ্মা নদীর কোলে গড়ে ওঠা এ জেলা পরিচিতি পেয়েছে ‘পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী’ হিসেবে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ জেলার বিশেষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রতœতাত্তিক নিদর্শন ও সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রেখে এ জেলার স্বাতন্ত্র্যকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কার্যকরভাবে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরার সুন্দর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলার স্বকীয়তা সংরক্ষণ ও পরিচিতি বৃদ্ধিার পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে, যা এ অঞ্চলের ও দেশীয় সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ সকল তথ্য সম্বলিত জেলা ব্র্যান্ডিং বুক প্রকাশ করা হয়েছে।
(২৮) আমার বাড়ী আমার খামার (সাবেক একটি বাড়ী একটি খামার) প্রকল্পের সুষ্ঠু তদারকি ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারমূলক কাজের মধ্যে আমার বাড়ী আমার খামার (সাবেক একটি বাড়ী একটি খামার) প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠু তদারকি ও সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মোট ১৮২টি সমিতির ৬,৯৭২ জন উপকারভোগী সদস্যকে ৩,১১,৯৭,৫০০/- টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট ২৯৬টি সমিতির ৭,৮৬৬ জন উপকারভোগী সদস্যকে ১০,৭৮,৩৫,৫০০/- টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এসব সমিতির সদস্যদের সাথে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী নিয়মিত উঠান বৈঠকে মিলিত হয়ে তাদের স্বাবলম্বী হতে পরামর্শ প্রদান করছেন।
(২৯) রেকর্ডরুমকে ডিজিটাল রেকর্ডরুমে রূপান্তর ঃ ঘরে বসেই যাতে জনসাধারণ অনলাইনে খতিয়ান পর্চা সংগ্রহ করতে পারে তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রেকর্ডরুমকে ডিজিটাল রেকর্ডরুমে রূপান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে খতিয়ান এন্ট্রি ও আর্কাইভকরণের কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরীপ ও রেকর্ড প্রণয়ন এবং সংরক্ষণ (১ম পর্যায় ঃ বিদ্যমান মৌজা ম্যাপস এবং খতিয়ানসমূহের কম্পিউটারাইজেশন) প্রকল্পের আওতায় ৯,৪৭,৪৪৫টি খতিয়ান এন্ট্রি ও আর্কাইভের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১,৬০,৫৭০টি খতিয়ান এন্ট্রি ও আর্কাইভ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে একই প্রকল্পের আওতায় ৭,৮৬,৮৭৫টি খতিয়ান এন্ট্রি ও আর্কাইভের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৩,৫৫,৫৫৫টি খতিয়ান এন্ট্রি ও আর্কাইভ সম্পন্ন করা হয়েছে।
(৩০) বিভিন্ন জাতীয়/আন্তর্জাতিক দিবস, উৎসব উদযাপন এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান ঃ আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও বাঙালীর প্রাণের উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি এবং পহেলা বৈশাখ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আ¤্রকানন চত্বরে বর্ণিল ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী রাজবাড়ীবাসীকে আনন্দের ফল্গুধারায় অবগাহন করেছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, বিগত যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান জেলা প্রশাসকের সুযোগ্য নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী, চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ। শোকের আবহে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস। রাজবাড়ী জেলা থেকে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে সভা/সেমিনার, ইমাম সম্মেলন এবং মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় ওলামায়ে মাশায়েখদের ভূমিকা শীর্ষক একাধিক সেমিনার অনুষ্ঠান এবং জেলার একাধিক মাদ্রাসা বিভিন্ন তারিখে পরিদর্শন এবং মাদ্রাসা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সমাবেশ করে মুসলিম উম্মাহর সম্প্রীতি বজায় রাখার সফল প্রয়াস নিয়ে সকল মহলে সমাদৃত হয়েছেন জেলা প্রশাসক।
তিনি যাকাত বোর্ডের মাধ্যমে আদায়কৃত যাকাতের অর্থ দুঃস্থ ও গরীবদের মাঝে বিতরণ করে যাকাতের অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এবং পবিত্র ঈদ-উল-আযহার পবিত্র দিনে তিনি রাজবাড়ী সরকারী শিশু পরিবার তথা সরকারী এতিমখানার নিবাসীদের সাথে সামিল হয়ে ঈদ উদযাপন করে সমাজের দরিদ্র এতিম শিশুদের প্রতি তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও তার সরব উপস্থিতি ছিল মনে রাখার মতো। শুভ জন্মাষ্টমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত র্যালীতে অংশগ্রহণ, জেলার প্রাচীন মন্দিরসমূহ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেছেন। তিনি মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমসহ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের একাধিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন দুর্গাপূজা মন্দির সরেজমিনে পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শুভ বড়দিন অনুষ্ঠানে কেক কেটে তাদের উৎসবের সাথে নিজেকে সামিল করেছেন। রাজবাড়ী জেলা শহরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থানের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণে তিনি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন এবং মর্গের পাশেই আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের লাশের গোসলখানা নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করেছেন।
(৩১) নারী ও শিশুর জীবনমান উন্নয়ন ঃ রাজবাড়ী জেলার নারী ও শিশুর জীবনমান উন্নয়নে জেলা প্রশাসকের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি শিশু একাডেমী, মহিলা বিষয়ক অফিসসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।
(৩২) বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ঃ রাজবাড়ী জেলায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে নিয়মিত জেলা ও উপজেলা বাল্য বিবাহ নিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা অনুষ্ঠানসহ সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনমত গঠনের মধ্য দিয়ে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতামূলক সভা/সেমিনার করা হয়েছে।
(৩৩) আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ঃ সরকার কর্তৃক গঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি এবং জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠান, জেলার আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, আনসার/ভিডিপি বিভাগের সাথে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন, নিয়মিত থানাসমূহ পরিদর্শন, গ্রাম পুলিশ ও আনসার/ভিডিপি সদস্যদের বিভিন্ন সভা/সমাবেশে যোগদান করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রেখেছেন। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনশীল ও সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখতে দক্ষতা ও প্রয়োগসিদ্ধভাবে মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্সের মাধ্যমে ইভটিজিং প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের ব্যবহার প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। এখানে বলে রাখা ভালো, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সুদক্ষ নির্দেশনায় পরিচালিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরেজমিনে অপরাধীকে হাতে-নাতে ধরে জনসম্মুখে তাৎক্ষণিকভাবে বিচার কাজের মাধ্যমে একদিকে যেমন সাজা প্রদান করা হচ্ছে তেমনি এর একটি উবসড়হংঃৎধঃরড়হ ঊভভবপঃ সমাজে প্রতিফলিত হচ্ছে।
(৩৪) দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপনা ঃ দৌলতদিয়া ঘাট প্রসঙ্গে বলতে গেলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসকের অবদান উল্লেখ করার মতো। কার্যতঃ এ ফেরী ঘাট দিয়ে ভিভিআইপি/ভিআইপিগণের পারাপারের সময় প্রয়োজনীয় প্রটোকল প্রদান, আটরশি ও চন্দ্রপাড়ায় ওরশ শরীফ এবং দুই ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারের সময় যানজট নিয়ন্ত্রণ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা প্রশাসক স্বয়ং কখনো সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে, কখনো এডিসি পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান অনিয়ম দূরীকরণে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানসহ ঘাট এলাকায় অপরাধ দমনে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সভাপতিত্বে নিয়মিত দৌলতদিয়া ঘাট ক্রাইসিস ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভা অনুষ্ঠানেও সহায়তা প্রদান করেছেন।
(৩৫) ডিজিটাল কার্যক্রম সম্প্রসারণ ঃ ডিজিটাল কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন কার্যক্রম, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ জেলার সকল অফিসকে ই-নথি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় আনার লক্ষ্যে উক্ত অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন, ওয়েব পোর্টাল রিফ্রেসার্স ও ইউজার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করে সার্বিকভাবে ডিজিটাল কার্যক্রমের সম্প্রসারণ করতে সফল হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কাজের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে ই-ফাইলিং কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়া সরকারী অফিসসমূহের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র যোগাযোগ স্থাপন, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা আয়োজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা, বিসিসি কর্তৃক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত কম্পিউটার ল্যাবরেটরীতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণে জেলা প্রশাসক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে কনফারেন্স সাউন্ড সিস্টেম সংযোজন করে সম্মেলন কক্ষকে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন সম্মেলন কক্ষে রুপান্তর করেছেন।
উপরে বর্ণিত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ছাড়াও তিনি জেলার বিভিন্ন সেক্টরে জনসেবাধর্মী একাধিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। কার্যতঃ জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক চিন্তা গভীরভাবে মানবিক ও অধিকার পরিপ্রেক্ষিত নির্ভর। কর্মক্ষেত্রেও তার সততার সুনাম রয়েছে। তার ব্যতিক্রমধর্মী সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ড রাজবাড়ীর উন্নয়নে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, যা যুগ যুগ মনে রাখবে রাজবাড়ীর রাজপ্রাণ মানুষেরা।
লেখক ঃ মকবুল হোসেন খান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে কর্মরত।