Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ীতে র‌্যালী ও আলোচনা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে “মালিক শ্রমিক ভাই ভাই-সোনার বাংলা গড়েতে চাই”-শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে গত ১লা মে সকালে র‌্যালী ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণের আম্রকানন চত্বর থেকে র‌্যালীটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আলোচন সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী। জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, অন্যান্যের মধ্যে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকিবুল ইসলাম পিন্টু, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সাইফুদ্দিন হাবিব, জেলা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল ওহাব সরদার, হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, জেলা সড়ক পরিহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান মৃধা এবং জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদসহ জেলার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শ্রমিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা মহান মে দিবস হিসেবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একসাথে পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি আসলে আমাদের মনে পড়ে সুদূর আমেরিকার শিকাগো শহরের কথা। ১৮৮৩ সালের এই দিনে সেখানকার শ্রমিক ভাইয়েরা আট ঘন্টার বেশী কাজ না করার দাবী আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাদের সেই আত্মাহুতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘১লা মে’কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বর্তমান সরকার শ্রমিক ও কৃষি বান্ধব সরকার। দেশের প্রতিটি মানুষকে কাজ করে খেতে হয়। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। আমাদের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। যার কারণে আমাদেরকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হয় এবং কি কাজ করলাম তার জন্য সরকার ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসককেও জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য দিনে চৌদ্দ থেকে ষোল ঘন্টা কাজ করতে হয়। আপনারা (শ্রমিকরা) যেমন কাজ করেন, আমাদেরও তেমনি জেলার উন্নয়নে কাজ করতে হয়। আপনার যারা শ্রমিক আছেন তারা যে সেক্টরেই কাজ করেন মালিকদের সাথে সম্পর্ক ভালো রেখে কাজ করবেন। মালিকদেরও উচিত শ্রমিকদের সাথে ভালো আচরণ করা এবং শ্রমিকদের দিয়ে আট ঘন্টার বেশী কাজ করালে তাদেরকে ওভারটাইম দেওয়া। কোন প্রতিষ্ঠানে যদি ভালো মুনাফা হয় তাহলে সেই মুনাফার কিছু অংশ শ্রমিকদেরও দেওয়া। তাতে শ্রমিকরা খুশি হয়ে আরো ভালো কাজ করে। শ্রমিক ভাইদের উচিত আপনারা মালিকের যে আট ঘন্টা কাজ করবেন সেই কাজ মনোযোগ দিয়ে করা। তাতে মালিকের তথা দেশের উন্নতি হয়। আজকে আমরা পৃথিবীর যে কোন দেশে গিয়ে পণ্য কিনলে দেখি সেসব পণ্যের গায়ে লেখা মেড ইন চাইনা। কিন্তু কেন? কারণ চীনের শ্রমিকরা যাতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে এবং শ্রমিকরা যাতে তাদের ন্যায্য মজুরী পায় সেই দিকে খেয়াল রাখা হয়। যার কারণে চায়নাসহ বিশ্বের অনেক দেশ সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে আমরা উন্নয়শীল দেশে পরিণত হয়েছি। আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই তাহলে আমাদের উচিত হবে আমরা যে আট ঘন্টা কাজ করব তা মনোযোগ দিয়ে করা। তবেই সেদিন আর বেশী দূরে নয়, যেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আজকে সারা বিশ্বের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় দুইশত দেশের শ্রমিক ভাইদের ন্যায় রাজবাড়ী জেলার শ্রমিক ভাইয়েরা মহান মে দিবস পালন করছে। আপনাদের সকলেরই জানা, ১৯৮৩ সালের এই দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে অনেক শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে দিবসটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমরা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তেমনি ১৬ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ ঘন্টা কাজ করার দাবীতে আন্দোলনকারী অসংখ্য শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে আজকের এই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সব শ্রমিক ভাইদের কথা চিন্তা করে শ্রমিক ভাইদের ন্যায্য দাবী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যা এদেশের শ্রমিক ভাইদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিক, বিদেশে যেসব শ্রমিক ভাইয়েরা কাজ করেন তাদের প্রেরিত অর্থ এবং সকল পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজের প্রতি ভালোবাসার কারণেই আজ আমাদের রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তিতে পৌঁছেছে। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার কারণে।
তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে ভেদাভেদ ভুলে শ্রমিক-মালিক-সরকার সকলকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নত-সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে শ্রমিকসহ সকল মানুষের জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় গৃহীত কার্যক্রমসমূহ তুলে ধরেন।