Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

আগামীতে সকল স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহার করা হবে—প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে.এম নূরুল হুদা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে.এম নূরুল হুদা বলেছেন, আগামীতে সকল স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে। বায়োমেট্রিক তথ্য থাকায় রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
গতকাল ২৩শে এপ্রিল দুপুরে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি কে.এম নূরুল হুদা আরও বলেন, রাজবাড়ী জেলা একসময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ছিল। বৃটিশ আমলে এই জেলার উপর দিয়ে সারা বাংলাদেশের সাথে ভারতবর্ষের যোগাযোগ ছিল। বড় বড় স্টিমার এই জেলার গোয়ালন্দ ঘাটে এসে থামতো। সেই হিসেবে এই জেলাকে চেনে না এমন লোক বাংলাদেশে খুব কমই আছে। সেই জন্য আমি এই জেলার মাধ্যমে আজকের এই ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রম উদ্বোধন করবো বলে ঠিক করেছি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে যারা বাংলাদেশে বাস করে আসছেন ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী তারা সকলে এদেশের নাগরিক হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত দন্ডিত আসামী ছাড়া যার বয়স ১৮ তারা সকলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এবার এই হালনাগাদ কার্যক্রমে ২০০৪ সালের পহেলা জানুয়ারী বা তার আগে যাদের জন্ম তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের নাম ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। যাদের বয়স এখনো ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি, তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে জন্ম নিবন্ধনের সময়ই তাদের ভোটার তালিকার যাবতীয় তথ্য নিয়ে নেয়া হয়, যা নিবন্ধনকারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় চলে আসে। এশিয়ার অধিকাংশ দেশ অনুন্নত হওয়ায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির কম ব্যবহার হওয়ার কারণে আমাদের এই জন্ম নিবন্ধনের সময় ভোটার তালিকার সকল তথ্য সংযুক্তি করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু বাংলাদেশ আগের তুলনায় সর্বদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারে অগ্রগতি সাধন করেছে সেই কারণে আমাদের দেশেও ভবিষ্যতে জন্ম নিবন্ধনের সময়ই ভোটার তালিকার সমস্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। যা এ বছর থেকে যাদের বয়স ১৮ বছর হতে আরো ২বছর বাকি আছে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এই ভোটার তালিকায় যার নাম অন্তর্ভুক্ত হবে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যার মাধ্যমে সে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন একজন নাগরিকের যাবতীয় তথ্য সম্বলিত যে ভোটার তালিকা তৈরী করছে সেটি শুধু নির্বাচন কমিশনই ব্যবহার করবে না বরং এই তালিকা দেশের ব্যাংক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় কাজে যাদের দেশের নাগরিক সম্পর্কে তথ্য দরকার তারা এই তালিকা ব্যবহার করতে পারবেন। তাতে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজও অনেক কমে গেল।
সিইসি কে.এম নূরুল হুদা বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই কারণে যে, আজকে রাজবাড়ী জেলার ভোটার তালিকা হালানাগাদ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশের ২০১৯ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচী শুরু হতে যাচ্ছে।
তিনি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানান, রোজার ঈদের পরে ৫ম পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার করা যায় কি না সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন চিন্তা-ভাবনা করবে। এছাড়া আগামীতে দেশে যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই নির্বাচনসহ এর পরবর্তী সকল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। আর এমপিরা এমপি থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, এটি শুধু বাংলাদেশে নয়-পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রচলিত আছে। তাছাড়া এমপিরা এমপি থাকা অবস্থায় নির্বাচন করবেন এই অধিকার তাদেরকে সংবিধানই প্রদান করেছে। সংবিধানের বাইরে কাজ করার অধিকার আমাদের কারোই নাই। নির্বাচনে যানবাহন সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, নির্বাচনে যে ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন তিনি যদি যানবাহন ছাড়া ভোট কেন্দ্রে আসতে না পারেন তবে তিনি বিশেষ বিবেচনায় যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। নির্বাচনের সময়তো রিক্সা চলে, ভোটার যদি পায়ে হেঁটে না আসতে পারেন তবে বিক্সায় আসবেন।
সিইসি কে.এম নূরুল হুদা আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে সেদিন আর বেশী দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নত দেশের কাতারে দঁড়াবে। তারই ধারাবাহিকতায় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা জিডিপি অর্জনে বিশ্বের ২য় অবস্থানে রয়েছি। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই জিডিপি আরো বেড়ে ১০ এর উপরে উঠে যাবে। যার মাধ্যমে আমরা উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে নিতে পারবো। সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। অনেকের বক্তব্য অনুযায়ী আমি অবগত হয়েছি, ৪র্থ ধাপে রাজবাড়ীতে যে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা আমি এখানে না আসলে হয়তো জানতে পারতাম না। আমি মনে করি সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার জন্য এত সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। সেই জন্য আমি রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি নির্বাচনের মতো এই ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রেও সকলে সম্বন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই কার্যক্রমকে সফল করবেন।
বক্তব্যের শেষে তিনি রাজবাড়ী পৌরসভার সজ্জনকান্দার নাজিয়া মাহমুদার ভোটার তালিকার তথ্য পূরণের মাধ্যমে ২৩শে এপ্রিল থেকে ১৩ই মে পর্যন্ত রাজবাড়ীসহ ৬৪টি জেলার ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ নূরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম, পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমাদাদুল হক বিশ্বাস, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নূরুল ইসলাম, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।