Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা ইলিশ!

॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে, ঘাটে প্রকাশ্যে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
পদ্মা নদী থেকে জেলেরা অন্যান্য মাছের সাথে এসব জাটকা শিকারের পর নিয়ে আসছে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট, বাজারে, দেবগ্রামের অন্তারমোড়, উজানচরের মজলিশপুর, চর করনেশনাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে। অথচ কর্তৃপক্ষের নাকের টগায় প্রকাশ্যে ডাক ওঠে মাছ বিক্রি হলেও কেউ যেন দেখার নেই।
সরেজমিন গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পদ্মা নদীতে দেখা যায়, অসংখ্য জেলে নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পাবনা, মানিকগঞ্জ অঞ্চলের জেলেরা এসে মাছ শিকার করছে। অনেক জেলে অন্যান্য মাছের সঙ্গে জাটকা ইলিশ শিকার করছে। এসব মাছ নদী থেকেই স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী কিনে বাজারে গিয়ে বিক্রি করছে। আবার অনেকে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও তা অমান্য করে জাটকা ইলিশ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে খুব সকালে দেখা যায়, স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী, আড়তদার ও আগত খরিদ্দারদের ভিড়ে জমজমাট অবস্থা। বিভিন্ন ধরনের মাছ ডালিতে রেখে হাঁক-ডাক পারছে আড়তদারদের লোকজন। এসময় প্রায় প্রতিটি আড়তদারের ডালিতে জেলেরা ব্যাগ বা ঝুড়িতে করে জাটকা ইলিশ এনে রাখছে আর তাদের মনোনিত লোকজন ওই মাছের ডাক হাঁঁকছে একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, আড়তদার দুলাল মিয়ার ডালিতে কয়েক জেলে অন্যান্য মাছের সঙ্গে জাটকা ইলিশ এনে রাখার পর জোরে সরে ডাক হাঁকা হচ্ছে। ১৫০ টাকা কেজি দরে ডাকার পর এক পর্যায়ে মুহুর্তের মধ্যে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে গেল। তাতে অন্তত ৭/৮ কেজি করে প্রায় দুই দফা জাটকা ইলিশ বিক্রি হলো। এসব ইলিশ দ্রুততার সাথে ঝুড়িতে রেখে তার ওপরে ভিন্ন প্রজাতির মাছের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখলো। প্রতিদিন এরকম ভাবেই জাটকা বেচাকেনা চলছে।
এ সময় ব্যবসায়ী ক্রেতা আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এই মাছ বাজারেই বিক্রি হবে। নিষেধাজ্ঞা সত্বেও এই মাছ কিনছেন কেন? জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কি করবো ব্যবসা তো ছাড়তে পারব না। তাছাড়া নদীতে অসংখ্য নৌকা সব ধরনের মাছই ধরছে। অন্যান্য মাছের সাথে জাটকা ধরছে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সতকর্তার সাথে কিনে আবার বিক্রি করছি। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।
দৌলতদিয়া ঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা মোহন মন্ডল বলেন, বর্তমানে সব ধরনের মাছের আমদানী কমছে। জাটকা ইলিশ ধরা বা বিক্রি করা নিষেধ হলেও পাবনা ও মানিকগঞ্জের অনেকে অন্যান্য মাছের সাথে এসব মাছ ধরে বাজারে গোপনীয়তার সাথে এনে বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। আমার আড়তে এ ধরনের মাছ এখন পর্যন্ত কেউ আনতে পারেনি। তবে সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সবারই মেনে চলা উচিত।
কয়েকজন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীর জানায়, প্রতিদিন পদ্মা বা যমুনা নদী থেকে মাছ শিকারের পর কেউ মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে আবার অনেকে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট, বাজার, অন্তার মোড়, মজলিশপুর, করনেশনা এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যে বেচাকেনা করছে। অভিযানের সংবাদ পেলে তারা সবাই লুকিয়ে ভিন্ন পথ বেছে নেয়।
গোয়ালন্দ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল শরীফ বলেন, নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নিচে জাটকা ইলিশ শিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কেউ জাটকা শিকার করলে সর্বনিম্ন ৫হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের জেল হওয়ার বিধান রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক কেজি জাটকাসহ পাঁচ জেলেকে আটক ও প্রায় ৫হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করেছি। প্রয়োজনে আবারও অভিযান চালানো হবে।