Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

আগামী ২১শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ৩দিনের সরকারী সফরে ব্রুনাই যাচ্ছেন

॥মীর আফরোজ জামান॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ব্রুনাই সফরকালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আগামী ২১শে এপ্রিল থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র দেশটি সফর করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন গতকাল ১৮ই এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরে ছয়টি এমওইউ চূড়ান্ত করেছি। বাকি একটি এমওইউ বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগ আশ্বাস পাবার বিষয়ে আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাই দারুস সালামে ৩দিনের সরকারী সফরে দেশটির উদ্দেশ্যে রবিবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করবেন। দেশটির সুলতান হাজী হাসানাল বোলকিয়ার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা এই সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে স্বাক্ষর হওয়ার জন্য চূড়ান্ত তালিকায় থাকা এমওইউগুলো হচ্ছে- কৃষি, মৎস, পশু সম্পদ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও জ্বালানী সেক্টর।
সফরকালে দেশটির ইসতানা নূরুল ইমানে বায়তুল মেসউরায়ে সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সফর খুবই সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং জ্বালানী, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, খাদ্য, আকাশ পথে যোগাযোগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন এবং প্রযুক্তি সেক্টরে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করবে। ব্রুনাই ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টর বিশেষ করে কৃষি ও জ্বালানী সেক্টরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ব্রুনাই। দেশটি ওআইসি এবং আসিয়ানের সদস্য। এই সফরকালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, আমরা যেখানেই যাচ্ছি, আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ফলে ব্রুনাই সফরেও এ বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপত্তা জোন গঠন করার জন্য আসিয়ানে প্রস্তাব দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব(বাইল্যাটারাল) মোঃ কামরুল আহসান বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারীদের একটি ব্রুনেই। তারা আমাদের কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ করতে পারে। তাদের চাহিদা মতো খাবার প্রস্তুত করে এখান থেকে রপ্তানি করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় রবিবার বিকেল পৌনে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনেইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ানের ব্রুনেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। যুবরাজ হাজী আল মুহতাদি বিল্লাহ বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন। সেখান থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে নেওয়া হবে এম্বায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে। সফরে এই হোটেলেই অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরের প্রথম দিন ওই হোটেলের বলরুমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দেওয়া নেশভোজে যোগ দেবেন তিনি।
পরদিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান বলকিয়ার সরকারী বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানের চেরাদি লায়লা কেনচানায় সুলতান ও রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবেন। এরপর সুলতানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠক শেষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। বিকেলে এম্পায়ার হোটেলে ব্রুনেই ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন এবং সেখানে আসর নামাজ আদায় করবেন শেখ হাসিনা। পরে সুলতানের সরকারী বাসভবনে তার দেওয়া ভোজসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার সকালে ব্রুনেইয়ের রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা জালান কেবাংসানে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। শেখ হাসিনা স্থানীয় আগামী ২৩শে এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশে ব্রুনাই ছাড়বেন।