Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ীতে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন গতকাল ১৭ই এপ্রিল সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কর্মসূচীর প্রথমে সকাল সাড়ে ৯টায় কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
এরপর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খানসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
এরপর শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রফেসর ফকরুজ্জামান মুকুট, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহসীন উদ্দিন বতু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলমগীর হুছাইন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার ঘোষণা জন্য ও তার অনুপস্থিতিতে তার ঘনিষ্ঠ সহচর মুজিবনগর সরকারের চার মন্ত্রী আমাদের জাতীয় চার নেতার বঙ্গবন্ধুর পূর্বের দিক-নির্দেশনা মোতবেক পাকিস্তানী প্রশিক্ষিত আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। আমাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানতে হবে। আর সেই জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যবই ছাড়াও লাইব্রেরী বা পত্র-পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে তারা আমাদের মহান স্বাধীনতা, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসসহ কীভাবে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছিলাম সেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী জাতীয় চার নেতা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন যদি মুজিবনগর সরকার গঠিত না হতো তবে আমরা বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতাম কিনা তা সন্দিহান ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তদানীন্তন গণপরিষদের সদস্যদের সরাসরি সমর্থনে ১০ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় আইনসম্মতভাবে সেদিন বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে জাতীয় চার নেতাকে বিভিন্ন মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল। এই সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক খুনী খন্দকার মোশতাক ছাড়া সকলেই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর। সরকার গঠনের পর থেকেই মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারছিলেন বিশ্বাস ঘাতক মোশতাক পাকিস্তানীদের সাথে ষড়যন্ত্র করছে। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাকে বিশেষভাবে নজরে রাখা হয়েছিল। সেই সরকারের নেতৃত্বে আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহযোগিতায় আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। অনেকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র পাকিস্তানী দালালরা বলে এই সরকার বৈধ ছিল না। আর সেই কারণে তারা যতদিন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল তাদের এই ভূল ব্যাখ্যার কারণে ততদিন বাংলাদেশে কখনোই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়নি। মূলত এই মুজিবনগর সরকার ১৯৭০ সালের নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ঐক্যমতের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আইনসম্মতভাবে গঠিত হয়েছিল। সেই জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ সকলকে আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসসহ এর সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আরো যেসব ইতিহাস জড়িয়ে আছে সে সম্পর্কে জানতে হবে।
আলোচনা সভার শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।