Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বাংলাদেশী হজ্ব যাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে ঢাকায়

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের এ বছর থেকে সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা হবে। এতে করে হজ্বযাত্রীদের জেদ্দা বিমানবন্দরে ৬-৭ ঘন্টা অপেক্ষার সময় ও কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ গতকাল ১২ই এপ্রিল সকালে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশী হজ্জযাত্রীদের সৌদি আরব পর্বের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করার সম্ভাব্যতা যাছাইয়ে আসা সৌদি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিং-এ এসব কথা জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রচলিত রীতি অনুসারে বাংলাদেশ বিমানের যাত্রীরা আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে ও সৌদি এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। আসন্ন হজ্বেও একই নিয়মে তারা আশকোনা হজ্ব ক্যাম্প ও শাহজালালে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন।
এরপর উভয় বিমানের হজ্বযাত্রীদেরকে শাহজালাল বিমানবন্দরের একটি এক্সক্লুসিভ জোনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাদের সৌদি আরবের জেদ্দায় যে ইমিগ্রেশনের কাজ হতো সেই কাজটি ওই এক্সক্লুসিভ জোনে সম্পন্ন করা হবে অর্থাৎ সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশনের কাজ সেখানে সম্পন্ন করে হজ্বযাত্রীরা স্ব-স্ব বিমানে আরোহন করে যাত্রা করবে। এক্সক্লুসিভ জোনের সব কার্য়ক্রম থাকবে সৌদি আরব নিয়োজিত টেকনিক্যাল দলের হাতে। এর ফলে বাংলাদেশী হজ্ব যাত্রীদের জেদ্দা বিমান বন্দরে ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করার বিড়ম্বনা লাঘব হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্য়ক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে আসন্ন হজ্ব মৌসুমে হজ্ব ভিসার জন্য এম্বেসীতে পাসপোর্ট জমা দেয়ার আগেই দেশের আট বিভাগে প্রত্যেক হজ্বযাত্রীর দশ আঙ্গুলের হাতের ছাপ সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজ্ব ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে রাজকীয় সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে তাঁর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ বছরের ২২শে ফেব্রুয়ারী হতে ২রা মার্চ পর্যন্ত সৌদি আরব সফর করেন। সফরকালে তারা সৌদি কর্তৃপক্ষকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে জেদ্দা বিমানবন্দরে বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের অপেক্ষার সময় ও কষ্ট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সৌদি আরবের পরিবর্তে হজ্ব যাত্রীদের বাংলাদেশেই প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুরোধ করেন।
সৌদি আরব সফরের পরপরই সৌদি কর্তৃপক্ষ তাঁদের মক্কা রুট ইনেসেয়েটিভ ফ্রেমওয়ার্ক এর আওতায় বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সৌদি আরবের একটি কারিগরি দল গত ২১শে মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময়ে প্রতিনিধি দলটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করে তাদের দেশে ফিরে যায়।
একই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের ডাইরেক্টর জেনারেল(পাসপোর্ট) মেজর জেনারেল সোলাইমান আব্দুল আজিজ ইয়াহ ইয়াহর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি দল গত ৯ই এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন।
প্রতিনিধি দল গত ১০ ও ১১ই এপ্রিল ইমিগ্রেশন ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন এবং গত ১১ই এপ্রিল তারা সরেজমিনে হজ্ব অফিস আশকোনা, ঢাকা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন ভেন্যু পরিদর্শন করেন।
এ সময়ে প্রতিনিধি দলটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, আইটি কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান এবং সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স এর স্থানীয় প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করে এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত হয়।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, গত ১১ই এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলটি তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে। এ সময়ে উভয়পক্ষ বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সৌদি আরবের পরিবর্তে বাংলাদেশে সম্পন্ন করার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পারস্পরিক সর্বাত্মক সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন।
উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে, আসন্ন হজে পবিত্র হজ্ব পালনে বাংলাদেশ থেকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৭হাজার ১৯৮জন ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ১লাখ ২০ হাজারসহ মোট ১লাখ ২৭ হাজার ১৯৮জন হজ্বে যাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোট হজ্বযাত্রীর শতকরা ৫০ ভাগ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশী হজ্ব যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে বাংলাদেশী হজ্ব যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সৌদি আরবের পরিবর্তে বাংলাদেশেই সম্পন্ন করার বিষয়ে যা যা করণীয় দরকার তা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।“ আমরা তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়টিতে অগ্রসর হচ্ছি। এছাড়া এ বছর হজের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি এবং ২০১৯ সালের হজযাত্রীদের বিমানভাড়া দশ হাজার টাকা পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছি।’
এছাড়াও সরকারী হজ্বযাত্রীদের বাড়ীভাড়া করার উদ্দেশ্যে বাড়ীভাড়া সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গত ৬ই মার্চ সৌদি আরব সফর করে এবং হজ্বযাত্রীদের জন্য বাড়ী ভাড়ার কাজ সম্পন্ন করে ইতোমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন বলেও জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
সৌজন্য সাক্ষাতে সৌদি প্রতিনিধি দলে অংশগ্রহন করেন সৌদি আরবের ডাইরেক্টর জেনারেল(পাসপোর্ট) মেজর জেনারেল সোলাইমান আব্দুল আজিজ ইয়াহইয়া, মেজর জেনারেল খালেদ বিন ফাহাদ আল যুইয়াদ (ডাইরেক্টর জেনারেল অব পাসপোর্ট), ডক্টর হুসাইন বিন নাসের আল শরীফ(সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়), আলী বিন মোহাম্মদ আল সাকিত(সৌদি স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়), মোহাম্মদ বিন ওবাযদে আল উতাইবি (সৌদি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ), ব্রিগেডিয়ার সামি বিন আব্দুল্লাহ মুকিম(সৌদি ন্যাশনাল ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রমুখ।
সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ধর্ম সচিব মোঃ আনিছুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মহিবুল হক, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন, কাউন্সেলর হজ্ব মোঃ মাকসুদুর রহমানসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।