Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে ভূমি সেবা সপ্তাহ ও ভূমি উন্নয়নকর মেলা উপলক্ষে র‌্যালী ও আলোচনা সভা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ভূমি সেবা সপ্তাহ ও ভূমি উন্নয়ন কর মেলা উপলক্ষে ‘বদলে গেছে দিনকাল-ভূমি ব্যবস্থাপনা হলো ডিজিটাল, মিউটেশন হলো ডিজিটাল, সুফল পাবে চিরকাল’-শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা ভূমি অফিসের আয়োজনে গতকাল ১০ই এপ্রিল সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি কালেক্টরেটের আ¤্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘জনবান্ধব ভূমি প্রশাসন ও নাগরিক কর্তব্য’ বিষয়ক আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আলমগীর হুছাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ এবং জেলা-উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ভূমি সকলের জীবনের একটি মূল্যবান সম্পদ। পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের জন্য প্রত্যেকেরই ভূমির প্রয়োজন। ভূমিহীন মানুষের সমাজে কোন মর্যাদা নেই। তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই ছিন্নমূল মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান সরকার এই ছিন্নমূল মানুষকে নামমাত্র মূল্যে ভূমি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। হয়তো এমন একদিন আসবে যখন দেশের প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই সরকার দেশের সকল ভূমির মালিক। এক্ষেত্রে ভূমিতে কোন কিছু করতে গেলে সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার জনগণকে ভূমির মালিকানার অধিকার প্রদান করেছে। তবে প্রয়োজনে সরকার ইচ্ছা করলে যে কোন ভূমি ক্ষতিপূরণ দিয়ে অধিগ্রহণ করতে পারে। এ সকল বিষয় সমাধানের জন্য জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর থেকে যে ভূমি আইন প্রণীত হয়েছে বা বর্তমানে দেশে যে সংশোধিত ভূমি আইন রয়েছে তার মাধ্যমে সরকার ভূমি সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান করছে। এই ভূমি সংক্রান্ত বিষয়কে আরও যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বর্তমানে নামজারী, পর্চা প্রাপ্তিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমাধান করা হচ্ছে। এর ফলে জনসাধারণের ভূমি নিয়ে বিভিন্ন ভোগান্তিসহ দালাল চক্রের উপদ্রব অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এখন ভূমির মালিকগণ যে ইউনিয়ন বা উপজেলায় বসবাস করুক না কেন তারা ইচ্ছা করলেই ভূমি সংক্রান্ত যে কোন বিষয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন করে সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে ভূমি অফিসে আসার বা দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।
তিনি সকলকে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা যেমন-পর্চা উঠানো, নামজারীসহ অন্যান্য যেসব সুবিধা অনলাইনে আবেদনে প্রদান করা হচ্ছে সেগুলো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, সরকারী মালিকানাধীন জমি রক্ষা করা যে কোন সরকারী কর্মকর্তার নৈতিক দায়িত্ব। বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনেক সেবা প্রদান করায় ভূমি সংক্রান্ত দালাল চক্রের উপদ্রব অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। যারা সরকারী জমি দখলসহ ভূমি অফিসে অসাধু কাজের সাথে জড়িত তারা ভূমি অফিস সংশ্লিষ্টদের নামে অনেক অসৌজন্যমূলক কথা ছড়াচ্ছে, যা আদৌ সত্য নয়। সুতরাং ভূমি আইন অনুযায়ী ভূমি অফিসে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সাথে জনগণকে কোন রকম হয়রানী ছাড়া সেবা প্রদানের আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসৎ পন্থা অবলম্বন বা জনগণকে হয়রানী করা ও সরকারী জমি রক্ষায় কোন ধরনের গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধে সরকারী আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন। তিনি জেলার সকল ভূমি অফিসকে জনবান্ধব ভূমি অফিসে পরিণত করার আহ্বান জানান।