Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বিশাল জায়গা জুড়ে চর জাগছে॥সবুজে ভরে গেছে পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল

॥চঞ্চল সরদার॥ যে দিকেই তাকানো যায়, সে দিকেই শুধু ধূ-ধূ বালুচর। তবে এখন তা সবুুজে ভরে উঠেছে। রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চর এবার কৃষকদের আশা জাগিয়েছে।
চরের উপর নানা রকম ফসল ও সবজি চাষের কারণে চারদিকে এখন শুধু সবুজ আর সবুজ। বর্ষা মৌসুমে এখানকার এক রূপ আর শুষ্ক মৌসুমে তার আরেক চেহারা। এখন পদ্মার পাড় সবুজে ছেয়ে গেছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ধাওয়াপাড়া ফেরী ঘাটের পাশে কাবিলপুর চর, খাঁর চর এবং চর পদ্মায় ঘুরে দেখা যায় বর্তমানে চরের উপর বাদাম চাষ বেশি। এছাড়াও ভুট্টা, বাঙ্গি, পাট, ধান, সবজির ক্ষেতও রয়েছে। রাজবাড়ী জেলার প্রায় ৮৫ কিলোমিটার অংশে রয়েছে পদ্মা নদী। আর এই বিশাল জায়গা জুড়ে যেখানে চর জাগছে সেখানে তাকালেই চোখে পড়বে ফসল আর ফসলের ক্ষেত্র। এবার চরের উপর দিয়ে ফসলও অনেক ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কৃষকরা।
তারা বলছেন, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আমারা ভালো ফসল পাবো। এছাড়া পদ্মার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনিই দূর-দূরান্ত থেকে পদ্মার পাড়ে ছুটে আসছে মানুষ।
চরে ঘুরতে আসা সূর্যনগর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ ফরিদ দেওয়ান বলেন, চরের উপর গেলে ভালো লাগে। আমি যখন সময় পাই তখনই এদিকে ঘুরতে আসি। নদীর মাঝখানে চর জাগছে। চরে দাঁড়ালে মনে হয় সমুদ্রের বেলা ভূমি এবং ছোট ছোট পাখি আছে উড়ে বেড়া। সেগুলো দেখতে ভালো লাগে। চরের উপর নানা রকম ফসল ও সবজি চাষের কারণে চারদিকে এখন সবুজ আর সবুজ। এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেও অনেক ভালো লাগে তাই এখানে মাঝে মাঝে আসি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের বাদাম চাষী মুন্নু জানান, এবার তিনি কাবিলপুর চরের উপর ১৪ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। বাদাম গাছও অনেক সুন্দর হয়েছে। তিনি আশা করছেন এবার তিনি বাদাম চাষে লাভবান হবেন। আর দেড় থেকে ২ মাসের মধ্যেই বাদাম তোলা হবে।
তিনি বলেন, প্রতি বিঘা বাদাম চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় বাদাম পাওয়ার আশাা করছি ১৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত। আমি কয়েক প্রকার দেশী ও বিদেশী জাতের বাদাম চাষ করেছি। চরের উপর ফসল ভালো হয় এবং খরচ কম হয়। তাই ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
একই গ্রামের কৃষক মালেক সরদার বলেন, আমি এবার ৬ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। ধান মোটামুটি ভালো হয়েছে। আমার বেশীর ভাগ ধান কেটে ফেলেছি, অল্প কিছু ধান কাটার বাকি আছে।এখানে ধান চাষ করতে তেমন কোন খরচ হয় না। মাটিতে পলি পড়ার কারণে যা লাগানো যায় তাই ভালো হয়। ধানে তেমন কোন সার প্রয়োগ করতে হয় না এবং শ্রমিকও কম লাগে। তাই এখানে চাষাবাদ করে আমরা লাভবান হই। আমরা প্রতি বিঘা জমিতে ১৭/১৮ মণ করে ধান পাবো। এবার চরের উপর হাজার হাজার বিঘা ধান চাষ হয়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে।
ভুট্টা ও পাট চাষী জৌকুড়া গ্রামের সিরাজুল শেখ বলেন, এবার চরের উপর আমি পাট ও ভুট্টা চাষ করেছি। গাছও অনেক ভালো হয়েছে। আমি আশা করছি ফসল ভালো হবে। আমরা লাভবান হবো। চরের মাটি উর্বর থাকায় যাই চাষাবাদ করা হয় সেটাই ভালো হয়। খরচও কম লাগে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে তো ডুবে থাকে আর এই মৌসুমে চর জাগে তাই সেখানে চিনা বাদাম হয়। এ বছর গম ও সরিষাও চাষ হয়ছে। এখন চরের উপর চিনা বাদাম এর চাষ বেশি।এক মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকার কারণে দেখা যায় মাটিতে পলি পড়ে জমি উর্বর হয়। তার কারণে কৃষকদের খরচ কম হয় ফসলও ভালো হয়।